রংপুরকে বলা হয় অটোরিকশার নগরী। এখানে বৈধ-অবৈধ মিলে অন্তত দশ হাজারেরও বেশি ব্যাটারি চালিত অটো ও সাধারণ রিকশা চলাচল করে। বিভাগীয় শহর হওয়াতে প্রতিদিন নগর জুড়ে থাকে লাখো মানুষের আনাগোনা।
সড়কে বের হলে একাধিকবার পড়তে হয় ট্রাফিক সিগন্যালের মুখে। যানজট এখানকার নিত্য দুর্ভোগের রুটিন। পুরো নগরে মানুষের ঘুরপাক আর অগোছালো স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান দেখে মনে হতো অপরিকল্পিত নগরায়ণ। কিন্তু সেই রংপুর এখন জনশূন্যতার সঙ্গে ভিন্নরকম পরিবেশ বিরাজ করছে। যেন এক অচেনা শহর।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি ঘোষিত টানা দশ দিনের সাধারণ ছুটি ও আর সামাজিক দূরত্বই বদলে গেছে চির চেনা রংপুর। এখন কোথাও যানজট নেই। নেই হাজার হাজার অটো রিকশার জট। নেই লাখো মানুষের পদচারণ।
ভিক্ষুকের আহাজারি নেই। হাট-বাজারে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ানো লোকজন নেই। ফুটপাত দখলে নেই। সড়কে ভারী ও হালকা যানবাহনও নেই। পিনপতন শব্দও নেই। সবখানে ফাঁকা। জনশূন্যতা যেন একটা ভুতুড়ে পরিবেশ।
হঠাৎ কিছু মানুষের দেখা মিললেও যুক্তি ছাড়া মুক্তি মিলছে না তাদের। প্রশাসনের তৎপরতা তাদের বাইরে বের হওয়াতে কড়াকড়ি করেছে। অপ্রয়োজনে সড়কে ঘোরাফেরা করা মানুষদের ধাওয়া দেওয়াসহ তাৎক্ষণিক শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
নগরের বহুতল ভবনগুলো দাঁড়িয়ে আছে। দরজা বন্ধ রাখা হয়েছে বাসা বাড়ির। ছোট বড় মার্কেট, শপিংমল আর বিপণী বিতানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঝুলছে তালা। পাড়া মহল্লায় কিছু খাবার দোকান ও ফার্মেসি খোলা থাকলেও সেখানে নেই কোনো জটলা। ফুরফুরে মেজাজে সময় কাটছে দোকানিদের।
খেলার মাঠ থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাট, সড়ক-মহাসড়কে কোথাও নেই হৈচৈ। এমন জনশূন্য পরিবেশে বেলা গড়িয়ে বিকেল হলেও পাখপাখালি ফিরছে নীড়ে। র্যাব, পুলিশ আর সেনা সদস্যদের শাস্তির ভয়ে বাইরে আসা দিনমজুর ও শ্রমিকরাও হচ্ছেন ঘরমুখো।
আকাশের বিশাল বুকে ছোট ছোট তারার ছুটোছুটি আর নিস্তব্ধ নগরীর সৌন্দর্য দেখার মানুষও নেই কোথাও। সড়কের ল্যাম্প পোস্টগুলো আলো ছড়াচ্ছে বটে কিন্তু নির্জন নগরীতে রাত যত গভীর হচ্ছে ততোই ভিন্ন হচ্ছে পরিবেশ। এমন বিচিত্র পরিবেশ আর ধুলো উড়া শান্ত নগরী দেখতে বাইরে বের না হয়ে উঁচু ভবনের ছাদ কিংবা জানালার পর্দা সরালেই নজর কাড়বে জনশূন্য ভুতুড়ে নগরী।
মানুষের বিচরণ ছাড়া প্রকৃতি ও পরিবেশ কতটা সুন্দর তা হয়তো অনুভব করার জন্য এখন সঙ্গরোধে থেকে উপলব্ধি করা সম্ভব। সেটা রংপুরই হোক কিংবা অন্য কোন শহর।