পরিবহন খাতে নৈরাজ্য বন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও চান ‘পদক্ষেপ’

জেলা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 03:28:21

পরিবহন সেক্টরে অরাজক পরিস্থিতি বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ চান সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজের প্রধানরা। তাদের মতে, পরিবহন খাতে নৈরাজ্য চলছে। ছাত্রদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের আচরণ শোভনীয় নয়।

একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। এজন্য পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারকেই কার্যকর  ভূমিকা নিতে হবে বলে মানেন তারা।

রোববার (০৫ আগস্ট) শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন ঢাকা মহানগরীর সকল কলেজের (সরকারি-বেসরকারি) অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকা। এ সময় বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এসব কথা জানান। 

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবহন খাতে নৈরাজ্য চলছে। তারা ধর্মঘট ডেকেছে, তাই বাস চলছে না। শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে আসতে পারছে না। তাদের বিষয়ে সরকারের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে এ পদক্ষেপ জরুরি।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজ নিজ পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব দেন।

সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ কানিজ মাহমুদা বলেন, অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ক্লাস হচ্ছে না। এ ধর্মঘট বন্ধ করতে উদ্যোগ নেয়া হোক। এছাড়া শ্রমিকরা যাতে ছাত্রদের সাথে দুর্ব্যবহার না করে সে বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। আর পরিবহন শ্রমিকরা যাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘাতে না জড়ায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শওকত আলম বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ফেরাতে শিক্ষার্থীদেরই কাজে লাগাতে হবে। ছাত্রদের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা স্পটগুলো চিহ্নিত করে ছাত্র প্রতিনিধিদের বোঝানো বোঝাতে হবে। এছাড়াও সড়ক পরিবহন, নৌ, স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রী একযাগে মতবিনিময় করতে পারেন। তারা শিক্ষার্থীদের জানাতে পারেন সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে কি কি করা হবে।

উত্তরার ঢাকা বয়েজ কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানা বলেন, রাস্তায় এখন শিক্ষার্থীরা কম। তাদের সঙ্গে দুর্বৃত্ত যোগ দিয়েছে। এসব দুর্বৃত্তদের থামাতে  হবে। আমরা মাঠে থাকতে চাই। আমাদের সঙ্গে যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় থাকে তাহলে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্লাসে ফেরাতে পারব বলে আশা করি।

বাড্ডার মহানগর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ফৈজী আকতার বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা সবাই ক্লাসে আসছে। তবে আমার মনে হয়, স্কুলগুলোর সামনে যদি কিছু পুলিশ মোতায়েন করা যায়, তাহলে দুষ্টু ছেলেদের নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। আর এটা করা গেলে বিশৃঙ্খলা হতো না। আর স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করলে এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান সম্ভব। 

কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্যাহ খন্দকার বলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে মতবিনিময় সভায় স্কুল ও কলেজ প্রধানদের পরামর্শ জানতে চাইলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকরা বলেন, সড়ক আন্দোলনে অনেক কথিত শিক্ষার্থী ঢুকে গেছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র তৈরি করে তারা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

তারা বলেন, বর্তমানে সেসকল শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অনুপস্থিতি থাকবে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে হবে। অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাস শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মতবিনিময় করে বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হবে। পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে আলোচনা করে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া চালু করতে হবে। প্রধান সড়কগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পুলিশি নিরাপত্তা বসাতে হবে। অপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহারের নিশেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। আর যাতে আন্দোলনের দিকে ধাবিত না হয়, সে জন্য প্রতিদিন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে।

প্রতিষ্ঠান প্রধানরা আরো বলেন, যারা আন্দোলনের উস্কানি দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট তুলে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে হবে।

এ সময় দাবি মানার পরও শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে আন্দোলনে নামলে তার দায়িত্ব শিক্ষা প্রধানদের নিতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বোঝাতে হবে। প্রধান শিক্ষক হয়ে যদি শিক্ষার্থীদের বোঝাতেই না পারেন তাহলে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন কেন? শিক্ষাথীদের অবশ্যই শিক্ষকদের কথা শুনতে হবে।

মতবিনিময় সভাটি দুটি ভাগে সম্পন্ন হয়। প্রথম শিফটে ঢাকা মহানগরীর ২৪২টি সরকারি-বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ এবং দ্বিতীয় শিফটে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  ও সহকারি প্রধান শিক্ষকগণ অংশগ্রহণ করেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর