‘সড়ক পরিবহন আইন’ মন্ত্রিসভা বৈঠকে

জেলা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 05:08:47

প্রায় দেড় বছর পর ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উঠছে। সোমবার (৬ আগস্ট) সকাল দশটায় প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে শুরু হয়েছে। মন্ত্রীদের কাছে পাঠানো খসড়া নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা থাকায় শেষ পর্যন্ত আইনে কি কি থাকছে তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি।

জানা যায়, গত বছরের ২৭শে মার্চ ‘সড়ক পরিবহন আইন’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। খসড়া আইনে পরিবহনখাতে বিভিন্ন অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়। কিন্তু পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা এই খসড়া আইনের বিরোধিতা শুরু করেন। এই প্রেক্ষাপটে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলেও আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়নি।

তবে গত ২৯ জুলাই ঢাকার রাস্তায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী বাস চাপায় নিহত হলে নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন বিভিন্ন স্কুলে কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের নয় দফা দাবিতে জনগণও সমর্থন দেয়। শিক্ষার্থীদের নয় দফার অন্যতম দাবি ছিল কঠোর আইন প্রণয়ন।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের সব দাবি মেনে নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘সড়ক পরিবহন আইন’ ৬ই আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।’ যাতে সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

একই দিন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, সড়ক পরিবহন আইনের ভেটিং শেষ করেছে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ আইনের ভেটিং সম্পর্কিত নথিতে অনুমোদন দিয়েছেন। নথিটি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হতে পারে, সেগুলোর ব্যাপারে আইনে পর্যাপ্ত বিধান রাখা হয়েছে কিনা, কিংবা দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে রকম পর্যাপ্ত বিধান আইনের মধ্যে আছে কিনা এবং আইনে কোনো ফাঁকফোকর আছে কিনা এসব পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে সড়ক পরিবহন আইনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

এর আগে নীতিগত অনুমোদন হওয়া আইন অনুযায়ী জানা যায়, গাড়ি চালানোর সময় কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। করলে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। খসড়া আইন অনুযায়ী, সড়কের ফুটপাথের উপর দিয়ে কোনো ধরনের মোটরযান চলাচল করতে পারবে না। করলে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে। আগে গাড়িচালকদের লেখাপড়ার বিষয়ে কিছু না থাকলেও নতুন আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। কন্ডাক্টর বা চালকের সহযোগীকে কমপক্ষে লেখার ও পড়ার সক্ষমতাসহ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া থাকতে হবে।

যদি কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালায় তবে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কেউ এই অপরাধ করলে তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করার বিধান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে বর্তমানে ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা রয়েছে। চালকের সহকারির লাইসেন্স লাগবে। কন্ডাক্টরের লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে।

জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করলে আগে শাস্তি ছিল সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা। প্রস্তাবিত আইনে মূল শাস্তি কারাদণ্ড আগের মতোই আছে, জরিমানা ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। ফিটনেস না থাকা মোটরযান চালালে বর্তমানে শাস্তি রয়েছে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা। সেখানে এখন শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ শাস্তি পাবে মূলত গাড়ির মালিক। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দণ্ডবিধিতে যে শাস্তি রয়েছে সেই শাস্তি প্রযোজ্য হবে। দুর্ঘটনার মাধ্যমে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নরহত্যা হয়, তবে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা হবে। এটার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে শাস্তি যাবজ্জীবন।

বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা হলে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী ৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। গাড়ি ওজন সীমা অতিক্রম করলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা। এখানে মালিক ও ড্রাইভার দুই গ্রুপকেই যুক্ত করা হয়েছে, তারা উভয়ে দায়ী হবে। বেপরোয়া গাড়ি চালানো, দুই গাড়িতে পাল্লা দেয়ার কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা হবে। বেপরোয়া গাড়ি চালানো এবং এতে দুর্ঘটনা না ঘটলেও ২ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে নীতিগত অনুমোদন হওয়া আইনে। চালকের ভুলের কারণে পয়েন্ট কাটার ব্যবস্থা নতুন সড়ক পরিবহন আইনেও রাখা হয়েছে। এ জন্য ১২ পয়েন্ট রাখা হয়েছে। কোনো ড্রাইভার অপরাধ করলে তার পয়েন্ট কাটা যাবে। যদি কারো ১২ পয়েন্টই কাটা যায় তা হলে তিনি আর কোনোদিনও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন না। কত পয়েন্ট কাটলে কী পরিমাণ শাস্তি হবে আইনে তাও বলা আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর