কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েকদিন আগেও ডলফিনের শো দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছিল। এবার সেই ডলফিনগুলোর ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ দেখতে হচ্ছে! একের পর এক সাগর তীরে ভেসে আসছে ডলফিনের মৃতদেহ।
নির্জন সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জলে ভাসতে থাকা ডলফিনগুলোকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে! সামুদ্রিক প্রাণীটির শরীরের ক্ষত চিহ্ন দেখে তা আর বোঝার বাকি থাকে না। ডলফিনের মৃতদেহ ভেসে আসার জন্য প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রা জেলেদের দায়ী করলেও কেউ রাজি নয় এর দায় নিতে। বরং পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন বোট মালিক সমিতির নেতারা।
জানা যায়, গত চারদিনে কক্সবাজার উপকূলে ভেসে এসেছে অন্তত ১২টি ডলফিনের মৃতদেহ। পাশাপাশি পাওয়া গেছে ৪টি মৃত কাছিমও। তার মধ্যে, টেকনাফের শাপলাপুর সৈকতে ২ টি, দরিয়ানগর পয়েন্টে দুইটি, সানপ্যারাস্যুট পয়েন্টে দুইটি ডলফিন ও দুইটি কাছিমসহ বিভিন্ন পয়েন্টে মোট ছোট-বড় ১২ টি ডলফিনের মৃতদেহ দেখেছে স্থানীয়রা। এসব মৃত ডলফিনের শরীরে দা’য়ের কোপ ও লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে ডলফিন হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলেরা।
টেকনাফের শাপলাপুর ক্ষুদ্র নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি বেলাল উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের নৌকাগুলো ছোট। বড় বড় ট্রলারের জেলের জালে বাজলে এসব ডলফিন আঘাত পায়। কারণ ডলফিন জালে ঢুকলে তাদের মাছ আহরণে ব্যাঘাত ঘটে।
এ অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ৭ থেকে ৮ বামের ( ৭-৮ মাইল) ভেতরে ডলফিনরা খেলা করে। কিন্তু আমাদের কোন ফিশিংবোট ১৪ বামের ভেতরে মাছ আহরণ করে না। যারা ছোট ছোট নৌকা নিয়ে ৭-৮ বামের মধ্যে মাছ আহরণ করে তারা এ কাজ করতে পারে। কারণ তাদেরগুলো কারেন্টজাল। জালে ডলফিন বাজলে বাঁচার উপায় নেই। তাই ডলফিনের উপর চড়াও হয় জেলেরা।
প্রাণ প্রকৃতি রক্ষার আহবান জানিয়ে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাণ প্রকৃতির উপর এমন আঘাত মেনে নেয়া যায় না। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর এমন ভয়াবহ দাপটেও আমরা থামছি না। এখনও আমরা কেন বুঝতে চাই না যে, প্রাণ প্রকৃতি না থাকলে শুধু মানুষ নয় পৃথিবীর অস্তিত্বই থাকবে না। কক্সবাজার উপকূলে ডলফিনের এমন মৃত্যু চাই না। এটা আমাদের জন্য অশনিসংকেত। প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সৈকতে ডলফিনের মৃতদেহ ভেসে আসার কথা স্বীকার করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডলফিন হত্যায় কারা জড়িতে সে বিষয়ে তদন্ত করছে জেলা প্রশাসন। কিছুদিনের মধ্যে এ রহস্য বেরিয়ে আসবে। এছাড়াও কয়েকটি এলাকাকে বিশেষ জোন ঘোষণা করে সকল প্রকার মাছ আহরণ ও মানুষের চলাচল বন্ধ করা হবে। আশা করছি ডলফিনের আবাসস্থল করে দিতে পারব।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ২৩ মার্চ (সোমবার) সকাল থেকে এক দল ডলফিনের শো দেখা যায়। ১০ থেকে ১২টি ডলফিনের এই দলটি সকাল ৯টা থেকে সাগরে নীল জলে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলছিল। কয়েকদিন ধরে দেখা গেলেও, তার কিছুদিন পরেই তা হারিয়ে যায়। পরে সৈকতে ভেসে আসতে শুরু করে একের পর এক ডলফিনের মৃতদেহ।