জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ জিয়াউর রহমানের ছায়াতলে ছিলেন। তৎকালীন এই সেনা প্রধানের হাত ধরেই খুনি থেকে সচিব হয়েছিলেন মাজেদ।
বঙ্গবন্ধু খুনি আব্দুল মাজেদ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বলেছেন, জিয়াউর রহমান সরকার খুনি আব্দুল মাজেদকে নানাভাবে রক্ষা করেছে। জিয়া তাকে পদে পদে পুরস্কৃত করেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা ফেরারি আসামির তালিকা সূত্রে জানা যায়, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। হত্যাকাণ্ড শেষে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার অপর আসামি মেজর শাহরিয়ার এবং হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অন্য সেনা সদস্যদের সঙ্গে রেডিও স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এছাড়াও তিনি অফিসারদের সঙ্গে দেশত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত বঙ্গভবনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অন্য অফিসারদের সঙ্গে বাংলাদেশ হতে ব্যাংকক হয়ে লিবিয়াতে গমন করেন মাজেদ। তাকে এসব ব্যবস্থা করে দেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান।
সেখানে ওই অফিসারদের সঙ্গে প্রায় তিন মাস অবস্থান করেন মাজেদ। এরপর জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পুরস্কারস্বরূপ তাকে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বৈদেশিক বদলি প্রদান করেন। তারই অংশ হিসেবে ক্যাপ্টেন মাজেদকেও সেনেগাল দূতাবাসে বদলির আদেশ দেন জিয়া।
পরবর্তীতে ২৬ মার্চ ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান সরকার ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি প্রদান করেন। ফলে উপসচিব পদে যোগদানের সুবিধার্থে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করতে হয় তাকে। কিছু দিন পরেই তাকে সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়।
এরপর মাজেদ মিনিস্ট্রি অব ইয়ুথ ফুড ডেভলপমেন্টে ডাইরেক্টর পদের জন্য আবেদন করেন এবং যোগদান করেন। সেখান থেকে ডাইরেক্টর এন্ড হেড অব ন্যাশনাল সেভিংস ডিপার্টমেন্টে বদলি হন। তার এই পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে জিয়াউর রহমান এবং শেষ পর্যায়ে বিএনপি সরকারের অবদান ছিল।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে। তখন আওয়ামী লীগ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য শুরু হয়। তখন থেকেই ক্যাপ্টেন মাজেদ আটক হওয়ার ভয়ে আত্মগোপনে যান।
এরপরে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আব্দুল মাজেদসহ ১২ আসামিকে ২০০৯ সালে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। আইনি প্রক্রিয়াশেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর হয়।
আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর থেকে আবদুল মাজেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মাজেদ গ্রেফতারের পর এখন বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনি পলাতক আছেন। তারা হলেন- খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেম উদ্দিন।
আসামিরা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা। তারা বিভিন্ন দেশে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
আরও পড়ুন: মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদ ঢাকায় গ্রেপ্তার
জিয়াউর রহমান বাঁচাতে চেয়েছিলেন, আমরা রায় কার্যকর করবো