করোনার প্রভাবে পুরো বিশ্ব এখন লকডাউন। বন্ধ হয়ে গেছে জীবন-জীবকার ছন্দ। অদৃশ্য ভাইরাসের ত্রাসে বাড়ছে আহাজারি। করুণ এই পরিস্থিতিতে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা আছেন চরম বিপাকে। অনেকে হয়ে গেছেন বেকার। নিরুপায় প্রবাস জীবন কাটছে তাদের। না পারছেন নিজের জন্য কিছু করতে। না দেশে থাকা পরিবারের জন্য। এমনই এক প্রবাসী নাজমুন নাহার নাজু। থাকেন কুয়েতে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে গত তিন মাস ধরে বেকার হয়ে দিন কাটছে তার। বর্তমান অবস্থায় দেশে থাকা পরিবারের কাছেও টাকা পাঠাতে পারছেন না নাজু। এতে তার পরিবার ঘরে যা ছিল, তার ওপর ভর এক রকম খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করেছেন। কিন্তু ঘরের খাবার ফুরিয়ে গেছে জানতে পেয়ে নিরুপায় হয়ে কুয়েত থেকে ফোনে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকারকে পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জানান প্রবাসী নাজু।
বুধবার (৮ এপ্রিল) রাতে ফোন পাবার কিছুক্ষণ ওই পরিবারের বাড়ির দরজায় খাদ্য সহায়তা নিয়ে পৌঁছে যান পুলিশ। দরজা খুলতেই সঙ্গরোধে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই খাদ্য সামগ্রী এসপি বিপ্লব কুমার সরকার স্যারের উপহার। তখন খাদ্য সামগ্রী ভরা বস্তা দেখে অনেকটা অবাক হন নাজুর পরিবারের লোকজন।
মানবিক সহায়তার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এসপি বিপ্লব কুমার সরকার। বুধবার (৮ এপ্রিল) রাতে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অনন্তরাম সরকারটারীতে এই ঘটনাটি ঘটে। প্রবাসী নাজুর দেয়া ফোন পেয়ে বিষয়টি তাৎক্ষণিক পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিমকে অবগত করেন বিপ্লব কুমার। তার নির্দেশে রাতেই কুয়েত প্রবাসির বাড়িতে টানা ১৫ দিনের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী নিয়ে হাজির হন পুলিশ।
জানা গেছে, প্রবাসী নাজুর বাড়িতে তার মেয়ে, ছেলে, বৃদ্ধ মা এবং জামাতা থাকেন। বুধবার বিকেলে হঠাৎ ঘরের খবার শেষ হয়। কিন্তু করোনার কারণে ঘর থেকে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকায় তার পরিবারের কেউ বাজারে যেতে পারছেন না। নিরুপায় হয়ে কুয়েত থেকেই এসপিকে ফোন দিয়ে পরিবারের সমস্যার কথা জানান নাজমুন নাহার নাজু। এরপর রাতেই এসপির পক্ষ থেকে চাল, ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ, আদা, মরিচ, রসুন ও কাঁচাবাজারসহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন পীরগাছা থানা পুলিশ।
এ ব্যপারে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ওই প্রবাসী গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছেন রংপুর জেলা পুলিশ বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। একারণে তার গ্রামের বাড়িতে খাবার সংকট দেখা দেয়ায় ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। বিষয়টি জানান পর তার খাদ্য পণ্যের তালিকা অনুযায়ী ওইসব পণ্য কিনে তার বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
প্রয়োজনে আরও খাবার সামগ্রী দেয়া হবে বলে জানান এসপি বিপ্লব। তিনি বলেন, করোনা দুযোগে কেউ না খেয়ে থাকবে না। সবার বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেয়া হবে। শুধু ফোন দিয়ে আমাকে জানাবেন ঘরে আছি, খাবার সংকটে পড়েছি। বাড়ির দরজায় খাবার পৌঁছে যাবে।