‘টুটুল খুন করার আগে সকালেও আমার বোনকে পরিবারের সবাই মিলে নির্যাতন করেছে। তারা আগেও আমার বোনকে মেরেছে। টাকার জন্য টুটুল প্রায় আমার বোনকে মারতো। সে খুন করার হুমকি দিতো।’ কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নিহত তাহমিনা আক্তারের বোন রেহানা আক্তার।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রী তাহমিনাকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও প্রকাশ করে স্বামী ওবায়েদুল হক টুটুল। ফেনী শহরের বারাহীপুরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মেয়েকে হত্যার অভিযোগ এনে টুটুলের বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহত তাহমিনার পিতা সাহাবউদ্দিন।
সাহাবউদ্দিন জানান, পাঁচ বছর আগে টুটুল ও তাহমিনা প্রেম করে বিয়ে করে। তাহমিনা চট্টগ্রাম একটি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করত। দেড় বছর আগে তাদের একটি মেয়ে হওয়ার পর টুটুলের পরিবার বিয়ে মেনে নেয়। বিয়ের শুরু থেকে বিভিন্ন সময় তাকে টাকা দিতে হত।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগ পর্যন্ত টুটুলকে ৭৫ হাজার টাকা ভাগে ভাগে দেওয়া হয়েছে। টাকার জন্য সে তাহমিনাকে চাপ দিত।
মেয়ের হত্যাকাণ্ড নিয়ে অশ্রুসিক্ত সাহাবউদ্দিন বলেন, টুটুল যেভাবে তার মা, বোন, ভাইকে আলাদা কক্ষে বেঁধে রেখে তাহমিনাকে হত্যা করেছে তা অবিশ্বাস্য।
রেহানা আক্তার বলেন, ছয় মাস আগে টুটুল, তার মা, বোন বৃষ্টি ও ভাই মেহেদী তাহমিনাকে খুব মারধর করে। দুই মাস আমাদের বাড়িতে থেকে সুস্থ হওয়ার পর আবার শশুর বাড়ি ফিরে যায়। টাকা দিলে কিছুদিন ভালো থাকে, এরপর আবার আবার নির্যাতন শুরু হয়। তিনি বলেন, নিজের পছন্দে বিয়ে করায় তাহমিনা কখনও শশুরবাড়ির বদনাম করতে চাইতো না।
সাহাবউদ্দিন জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে নিজ গ্রাম গুনবতীতে একটি এনজিও হতে সুদের ওপর ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মেয়ের সুখের জন্য টুটুলকে দেন।
টুটুলের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ড ও তাহমিনাকে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানায়। টুটুলের ছোট ভাই মেহেদী বলেন, ভাবীর অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে, এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার সূত্র ধরে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী জানান, সকালে মারামারি ও চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলে টুটুলের মা রেগে বলে, সবার ঘরে ঝগড়া হয় এখানে দেখার কিছু নেই।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সাজেদুল ইসলাম বলেন, তাহমিনা হত্যায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে, স্বামী আটক আছে। তদন্তের প্রেক্ষিতে সার্বিক বিষয় উঠে আসবে।
অনেকে বলছেন, সারা পৃথিবী যেখানে অদৃশ্য শত্রুর কবলে জর্জরিত। চলছে বৈশ্বিক মহামারির বিপর্যয়। এমন পরিস্থিতিতে ফেনীতে ঘটেছে আরেকটি ঘৃণ্যতম ঘটনা। একজন নারীকে নির্মমভাবে খুনের ভিডিও ফেসবুকে লাইভে প্রচারের ঘটনা কতটা নৃশংস, ভাবা যায়?