নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ছয় বছর পূর্ণ হলো সোমবার (২৭ এপ্রিল)। ২০১৮ সালের ২২ আগস্ট উচ্চ আদালত ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও বাকি আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
প্রায় দেড় বছর ধরে মামলাটি আপিল বিভাগে থাকায় নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা আসামিদের শাস্তি কার্যকরের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন। নিহতদের পরিবারসহ নারায়ণগঞ্জবাসী দ্রুত সাত খুন মামলার রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন ।
২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত খুনের সঙ্গে জড়িত থাকায় ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও নয় জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ভেতর সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ অন্যান্য সহযোগীরা।
আলোচিত সাত খুনে নিহতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার, যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপন, স্বপনের গাড়ির চালক জাহাঙ্গীর, নজরুলের সহযোগী তাজুল ইসলাম, নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন ও চন্দন সরকারের গাড়ি চালক ইব্রাহিম। নিহতের সাতটি পরিবারের মধ্যে পাঁচটি পরিবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে এখন অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সাত খুনে নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘ছয় বছর ধরে বিচারের আশায় আমরা আদালতে ঘুরছি। হাইকোর্ট ১৫ জনের ফাঁসি বহাল রেখেছে। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন। কিন্তু প্রায় দেড় বছর ধরে মামলাটি আপিল বিভাগে কেন ঝুলে আছে তা বুঝতে পারছি না। উচ্চ আদালত থেকে সাত খুনের আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দণ্ডাদেশসহ যে রায়টি হয়েছে সেই রায়টি যেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বহাল থাকে আমরা সেই দাবি করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাত খুনে সাতটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। এদের মধ্যে ৫টি পরিবার এখন চরম অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছে। আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন সাত খুন মামলায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে।’
নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ‘আমরা নিম্ন আদালত থেকে আসামিদের ফাঁসির রায়টি দ্রুততম সময়ে পেয়েছি। কিন্তু মামলাটি এখন উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আটকে আছে। আমরা বর্তমানে সাত খুন মামলাটি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। কারণ আসামিরা খুবই প্রভাবশালী। আমরা সাত খুন মামলার রায়টি জীবিত থাকতে দেখে যেতে চাই। নিহত সিরাজুল ইসলাম লিটনের বাবা গত কয়েকদিন আগে মারা গেছেন। তিনি তার ছেলের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারলেন না।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘সাত খুন মামলাটি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। হাইকোর্ট ডিভিশনে সাত খুন মামলায় যে সাজাটি বহাল রেখেছেন, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করেছেন। আশা করি এ বছরই শেষ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি হাইকোর্ট যে রায়টি দিয়েছেন সেটি আপিল বিভাগেও একই রায় বহাল থাকবে। এখন করোনাভাইরাসের কারণে উচ্চ আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ মামলাটি আপিল বিভাগে শেষ হলে এরপর রিভিউ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের তিনদিন ৩০ এপ্রিল নজরুলসহ ছয় জন ও ১ মে লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিরচর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।