বৈশাখের প্রখর রোদে সবুজ পাতা ভেদ করে লালচে বর্ণের রঙে আভা ছড়িয়েছে সুমিষ্ট ফল লিচু। পুষ্ট হয়ে ওঠা লিচু থোকায় থোকায় ভরে নুয়ে পড়েছে। সপ্তাহ পেরুলেই ফলের দোকানগুলোতে শোভা পাবে লিচু।
যশোরে বিস্তীর্ণ বাগানজুড়ে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে লিচুর ভালো ফলন হলেও দুচিন্তায় এ জেলার চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত দুই বছর রোজার মাসে লিচু পাকায় লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। এবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে লিচু নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।
সরেজমিনে যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন লিচু বাগানে ঘুরে দেখা গেছে, বাগানগুলোতে সবুজ লিচু লালচে বর্ণের রূপ নিয়েছে। মৌমাছি গুণগুণ করে এক লিচু থেকে আরেক লিচুতে বসছে। যশোরে মুম্বাই, দেশি, মোজাফফর ও চায়না- থ্রি জাতের লিচুর চাষ হয়েছে বেশি। এর মধ্যে পাক ধরতে শুরু করেছে দেশিগুলোর। আবার কেউ কেউ বোতি হওয়া লিচুকে অনিষ্টের হাত থেকে বাঁচাতে এরই মধ্যে জাল দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মতে, যশোরের আট উপজেলায় মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিচু চাষ হয় সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলায়। পরিবহন ও বাজার ব্যবস্থাপনা ভালো হওয়ায় দিনকে দিন এই জেলায় লিচু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে ৬০০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবারে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে লিচু গাছের মুকুল থেকে ফলে রূপান্তরিত হওয়ার মুহূর্তে শিলাবৃষ্টি না হলে আরও ভালো ফলনের আশাবাদী ছিল কৃষি বিভাগ।
যশোর সদর উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামের লিচু চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে এক লাখ টাকা দিয়ে একটি বাগান লিজ নিয়েছি। বাগানে দেশি, চায়না ও চায়না থ্রি লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। এক সপ্তাহ পরেই পুরোপুরি পাকতে শুরু করবে লিচু।’
একই এলাকার কৃষক শাহজাহান বলেন, ‘ভালো ফলন পেতে নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করেছি। কিন্তু লিচুর দাম নিয়ে সংশয়ে রয়েছি। করোনার কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার না আসায় লিচুর সঠিক দাম পাবো কিনা চিন্তিত।’
এদিকে, যশোর শহরের বাজারগুলোতে স্বল্প পরিসরে উঠতে শুরু করেছে লিচু। তবে দাম চড়া। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে মুম্বাই ও চায়না লিচু। বাজারে এক ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে লিচু খাতে সরকারি কোনো প্রকল্প না থাকায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। লিচুর স্বাদ ও কোয়ালিটি রক্ষার জন্য চাষিদের হরমোন প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।’