মধুমাস জ্যৈষ্ঠের আজ (১৫ মে) প্রথম দিন। এদিন থেকে রাজশাহীতে শুরু হচ্ছে ফলের ‘রাজা’ আম পাড়ার উৎসব। তবে এবার আগের মতো ‘উৎসবের আমেজ’ নেই।
বছর ঘুরে জ্যৈষ্ঠ মাস এলেও আমচাষিদের ঘরে উঁকি দিচ্ছে না নতুন স্বপ্ন। এর পরিবর্তে তাদের চোখে-মুখে রাজ্যের দুশ্চিন্তা। করোনাকালে গাছ থেকে আম পাড়া ও বাজারজাতকরণ নিয়ে আমের রাজ্য রাজশাহীতে কেবলই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
আমচাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আম পাড়া এবং তা বাজারজাত করাটা এবার বড় চ্যালেঞ্জ। লকডাউন শিথিলে দেশের বাজারে সরবরাহের সম্ভাবনা উঁকি দিলেও ইউরোপসহ আমের বিশ্ববাজার হারানোর শঙ্কায় চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশবাসীকে রাজশাহীর রাসায়নিকমুক্ত আম খাওয়ার সুযোগ করে দিতে বিগত চার বছর ধরে গাছ থেকে আম পাড়ার সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। গত ৮ মে এবারও প্রশাসন বিভিন্ন জাতের আম পাড়ার সময় ঘোষণা করে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুক্রবার (১৫ মে) থেকে সব ধরনের গুঁটি আম পাড়তে পারবেন চাষিরা। আর ২০ মে থেকে আমচাষিরা গাছ থেকে গোপালভোগ আম নামাতে পারবেন। এছাড়া রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা ২৫ মে, হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ১৫ জুন এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা এবং বারি আম-৪।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, আমরা আগেই ঘোষণা করেছিলাম, মুজিববর্ষে রাজশাহীর বিষমুক্ত আম হবে জাতির জন্য উপহার। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, করোনাকালেও অপরিপক্ব আম বাজারজাত ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আছে প্রশাসন। সুষ্ঠুভাবে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়েই আম নামানো হবে।তিনি বলেন, কৃষিপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কীভাবে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আমের কেনাবেচা নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে কাজ চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক উম্মে সালমা জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমবাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৫৭৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন।
এদিকে, জেলায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় বাঘা উপজেলায়। বাঘার আড়ানী পাঁচপাড়া গ্রামের আমচাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার নিজের বাগান সাড়ে তিন বিঘা জমিতে। পাশের গ্রামে ইজারা নিয়েছি আরও দুই বিঘা বাগান। বাগানে গোপালভোগ, খিরসাপাত আর ল্যাংড়া আম রয়েছে।
তিনি বলেন, আম পাড়ব কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি। কিন্তু গোপালভোগ আম শুরুতেই নামাতে হবে। তা না হলে গাছে পাকতে শুরু করবে। গাছে পাকা আম কেনার খদ্দের খুব কম। কী করব, তা ঠিকই করতে পারিনি। খুব বিপদে আছি, রাতের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে।
পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া গ্রামে আমচাষি রইছ উদ্দিন বলেন, খুব কষ্টে এবার আম পরিচর্যা করেছি। শ্রমিক পাইনি, কীটনাশকও কিনতেও বেগ পোহাতে হয়েছে। এখন বাজারে আমের দাম না থাকলে সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়বে।
তবে দেশের বাজারে আমের দাম ভালো থাকবে বলে মনে করছেন রাজশাহী কৃষি-সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল ইসলাম। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, দেশের বাজারে আমের ক্রেতা নিয়ে সমস্যা হবে বলে মনে করছি না। লকডাউন শিথিলে মানুষে বাজারে আসছে। তবে অর্থনৈতিক সমস্যায় মানুষ আম কিনবে কতটা সেটা বিবেচ্য বিষয়। কারণ রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম মানুষ নিজে কিনে খাই, অন্যদেরও উপহার হিসেবে পাঠিয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, দেশের বাজারের চেয়ে দুশ্চিন্তাটা বেশি বিদেশি বাজার হারানোর। ফ্রুটব্যাগ লাগিয়ে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন করা হয়। যা কেবল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। সেই বাজার এবার পাওয়া যাবে না। ফ্রুটব্যাগে আম চাষে খরচ বেশি। ফলে চাষিরা ভাল আম উৎপাদন করলেও বিদেশে না পাঠাতে পারায় ন্যায্যমূল্য পাবে না।