মেঘনার অভিশাপের খাতায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

জেলা, জাতীয়

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-18 15:30:56

লক্ষ্মীপুর: দেশে ১৮টি উপকূলীয় জেলা রয়েছে। যার ১৬টিই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলাও ঝুঁকিতে রয়েছে। জেলার কমলনগর, রামগতি, সদর ও রায়পুরে মেঘনার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে ক্রমশই ছোট হয়ে যাচ্ছে কমলনগর।

বর্তমানে উপজেলার চরকালকিনির নাছিরগঞ্জ, চরফলকনের লুধুয়া, সাহেবেরহাট ও পাটারিরহাটের ৬ কিলোমিটার এলাকা মেঘনার তীব্র ভাঙনের মুখে রয়েছে। এখন মেঘনার অভিশাপের খাতায় এসব এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। মেঘনার ভাঙনে যেকোনো সময় হারিয়ে যেতে পারে তাদের বসতঘরসহ বিস্তীর্ণ জনপদ।

দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে এই উপজেলায় মেঘনার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে বিলীন হয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, আশ্রয় কেন্দ্র, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও বেড়িবাঁধসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা।


জোয়ারের পানি ঠেকাতে উপজেলাটিতে এখন পর্যাপ্ত বেড়িবাঁধ নেই। বর্ষা মৌসুমে নদীর জোয়ারে ডুবে যায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। ফসলি জমি-মাঠ পেরিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে বসত ঘরেও। এ সময় পানিবন্দী হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। তখন আর মানুষের দুঃখের অন্ত থাকে না। শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে স্বজনরা।

এদিকে তীব্র জোয়ারের আঘাতে কাঁচা-পাকা অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে অল্পদিনেই সড়ক নষ্ট হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে কমলনগর রক্ষায় মাতাব্বরহাট এলাকায় মেঘনার তীরে এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ঠিকাদারের উদাসীনতা ও নিম্নমানের কাজসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে গত এক বছরে ৮ বার বাঁধটিতে ধস নামে। এর মধ্যে গত এক মাসেই তিনবার বাঁধটিতে ধস নেমেছে।

জানা গেছে, চরকালকিনি থেকে শুরু হয়ে পাটারিরহাট গিয়ে শেষ হয়েছে উপজেলার মেঘনা নদী এলাকা। এরমধ্যে চরকালকিনি, সাহেবের হাট, চরফলকন, চর লরেঞ্চ ও পাটারিরহাট ইউনিয়ন নদী তীরবর্তী এলাকায় রয়েছে। এসব ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ভাঙনের কবলে আরেকটি ইউনিয়ন চরমার্টিন যোগ হয়েছে। চরকালকিনি ইউনিয়নকে দ্বিখণ্ডিত করে মেঘনার ভাঙন দেখা দিয়েছে এই ইউনিয়নেও। বর্তমানে চরকালকিনির নাছিরগঞ্জ বাজার, চরফলকনের লুধুয়া ও পাটারিরহাটসহ প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকা মেঘনার তীব্র ভাঙনের মুখে রয়েছে।

চরমার্টিন এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জুনাইদ আল হাবীব জানান, চরমার্টিন ইউনিয়নে মেঘনার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এছাড়া বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয় জমির ফসল। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।

চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার সাইফুল্লাহ বলেন, ‘নদীর ভাঙনে আমার ইউনিয়নটি ছোট হয়ে গেছে। এ ভাঙনে হারিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ। বর্ষার মৌসুমে জোয়ার এলেই ইউনিয়নটি ডুবে যায়। রাস্তাঘাটে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে প্রতিবছরই ওইসব রাস্তাঘাট সংস্কার করতে হয়।’

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘জোয়ার ঠেকানোর জন্য মজবুত বেড়িবাঁধ দরকার। বিষয়টি আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলার সমন্বয় সভাতে জানাব।’

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা জানান, কমলনগর রক্ষায় এক কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এটুকু বাঁধ যথেষ্ট নয়। ভাঙন প্রতিরোধে ও জোয়ারের পানি ঠেকাতে আরও সাড়ে ১৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর