ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে রাজশাহীর বাগানগুলোর ২০ শতাংশেরও বেশি আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকালে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি। তাদের সাথে কথা বলে এখনও যেটুকু ধারণা, তাতে ঝড়ে রাজশাহীর বাগানগুলোর ২০ শতাংশ আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানা যাবে।
জেলা প্রশাসক হামিদুল হক আরও বলেন, জেলায় আম-লিচু ছাড়াও বোরো ধান, পানসহ অন্যান্য কৃষি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের কিছু বাড়িঘর ভেঙে পড়ার খবরও পেয়েছি। ইউএনও ও কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা খোঁজ-খবর নিয়ে প্রতিবেদন করছেন।
এছাড়া ঝড়ের মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মোহনপুর উপজেলায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলছেন ১৫ শতাংশের কিছু বেশি আম ঝরে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘রাতেই বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে আমরাই জেলা প্রশাসককে জানিয়েছিলাম যে ২০ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। তবে সকালে আমরা বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করে দেখছি- ক্ষতির পরিমাণ একটু কম। শহরের দিকে ১০ শতাংশ এবং চারঘাট উপজেলায় এসে ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়ার দৃশ্য দেখছি। বাঘা উপজেলায় বাগান বেশি, এখন সেখানে যাচ্ছি।’
তবে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার কয়েকজন আমচাষির সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন পরই যেসব আম পাড়ার কথা ছিল, তা ব্যাপক হারে ঝরে পড়েছে। এলাকাভেদে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আম নষ্ট হয়ে গেছে।
বাঘার আড়ানী পাঁচপাড়া গ্রামের আমচাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, গোপালভোগ আম নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আজ অথবা আগামীকাল পাড়ার দিনক্ষণও ঠিক করেছিলাম। কিন্তু ঝড়ে গাছ থেকে অর্ধেকের বেশি আম পড়ে গেছে। গাছেও অনেক আম ফেটে ফেটে ঝুলে আছে। আমাদের এ ক্ষতি কেউ পোষাতে পারবে না।
পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া গ্রামের আমচাষি রইছ উদ্দিন বলেন, খুব কষ্টে এবার আম পরিচর্যা করে টিকিয়ে রেখেছিলাম গাছে। এক ঝড়ে সব শেষ। কয়টা দিন পরই আম নামানোর কথা ছিল। একদম পরিপুষ্ট আম এভাবে নষ্ট হওয়া কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। ব্যাপক লোকসানে পড়তে হবে।
এদিকে, বুধবার (২০ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাজশাহীতে আম্পানের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ঝড়ের গতিবেগও। রাত ১১টা থেকে গোটা রাজশাহীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, রাজশাহীতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫৯ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে আম্পান। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এদিকে, সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে এখনও সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি।