রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ও রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা আয়েশা আক্তার লিজার তিন বছরের প্রেম। অতঃপর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আরো ৫ বছরের সংসার। পারিবারিকভাবে বিষয়টি দু'পক্ষ জানলেও পুরো ঘটনা ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে।
গেল সপ্তাহে হঠাৎ আয়েশা আক্তার লিজা তার ফেসবুক ওয়ালে এমপি এনামুল ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি, কাবিননামাসহ স্ট্যাটাস দেন। অভিযোগ তোলেন- স্ত্রী হিসেবে তাকে স্বীকৃতি দিতে টালবাহানা করছেন এমপি এনামুল হক। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও কথা বলেন আয়েশা আক্তার লিজা।
এমপি এনামুলও গণমাধ্যমে তাদের সম্পর্ক ও বিয়ে করার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে জানিয়ে দেন- বিয়ে করলেও এখন লিজা আর তার স্ত্রী না। আইন মেনে তিনি তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। টাকা-পয়সার লোভে লিজা এখন ফেসবুকে তার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
ঘটনা জানাজানি হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন এমপি এনামুল। তবে ঘটনার দু'দিন পরই এবার বাগমারা থানায় আয়েশা আক্তার লিজার নামে কোটি টাকা চাঁদা দাবি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন এমপি এনামুল।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) দিবাগত রাত ১২টার পর এমপি'র পক্ষে তার একান্ত ব্যক্তিগত সহকারি ও বাগমারা উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আয়েশা আক্তার লিজাকে তালাক দেওয়ার পর তিনি তার সাবেক স্বামী সাংসদ এনামুল হকের কাছে নিজের ব্যাংক লোনের এক কোটি টাকা পরিশোধের জন্য চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে সাংসদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছেন।
বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, 'বাগমারা থানায় দায়েরকৃত মামলা নম্বর-৬, তারিখ: ৫ জুন, ২০২০। পুলিশ আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে'।
মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংসদ এনামুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার লিজা বলেন, 'আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার এবং মেরে ফেলার হুমকি আগে থেকেই দেয়া হচ্ছিলো। তার অংশ হিসেবে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে'।
তিনি বলেন, 'আইনগতভাবে আমি এখনো সাংসদ এনামুল হকের বৈধ স্ত্রী। আমাকে তালাকের প্রথম নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। এখনো নোটিশ হাতে পাইনি। পরপর তিনটি নোটিশ তিনমাসে আসার পর তালাক চূড়ান্ত হয়। আমাকে তালাক দেয়ার বিষয়টি শুনতে পেয়ে আমি ন্যায় বিচার চেয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে ফেসবুকে ছবি দিয়েছি। এতে তার মানসম্মান নষ্ট হবার প্রশ্নই ওঠে না। যেহেতু আমরা বৈধ স্বামী-স্ত্রী'।
লিজা বলেন, দীর্ঘ আট বছর বিয়ের নামে নাটক করে আমার সঙ্গে সে ঘর-সংসার করেছে। এতো বছর পর যখন স্বামীর স্বীকৃতি চাইলাম, বাচ্চা চাইলাম; তখন আমাকে তালাক দেয়া হচ্ছে। আমার সঙ্গে নির্মম আচরণ, মানুষিক নির্যাতন, আমার পেটের বাচ্চা নষ্ট করা হয়। এসব বিষয় জনসম্মুখে আনার পরই এখন মামলা দেয়া হলো।
এমপি'র কাছে চাঁদা দাবির বিষয়ে আয়েশা আক্তার লিজা বলেন, 'সাংসদ এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন- আমি নাকি তাকে ব্লাকমেইল করে চাঁদাবাজি করে পাঁচতলা বাড়ি করেছি। অথচ এমপি এনামুল নিজেই আমাকে মেসেজ দিয়ে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে। সেই মেসেজ আমার কাছে এখনো আছে। আমিও তার নামে চাঁদা দাবি, প্রতারণা, নির্যাতন ও ভ্রূণ হত্যার মামলা করবো'।
মামলার বিষয়ে সাংসদ এনামুল হকের একান্ত সহকারি ও বাগমারা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি ব্যস্ত আছি। পরে ফোন করেন'। এরপর একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
মামলার পর সাংসদ এনামুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনিও আর ফোন ধরেননি। অবশ্য এর আগে তিনি গণমাধ্যমে বলেছিলেন, তিনি লিজাকে বিয়ে করেছিলেন। নিয়ম মেনে তালাকও দিয়েছেন। এখন লিজা তাকে অর্থের লোভে ব্লাকমেইল করছে।