নোয়াখালীর কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে স্বামীর সামনে থেকে গৃহবধূকে (২০) তুলে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনার ৯দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার কোন আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ বলছে তারা সবাই পলাতক, তাদের গ্রেফতারে প্রতিদিন অভিযান চলছে। অপর দিকে থানায় মামলা দায়েরের জন্য ভয়ংকর পরিণতি ভোগ করার হুমকি দিয়েছে মামলার আসামিরা। এ অবস্থায় ধর্ষণ মামলা করে বেকায়দায় পড়েছেন গণধর্ষণের শিকার ওই দম্পতি।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) কথা হয় ধর্ষণ মামলার বাদীর সাথে, তিনি জানান, ঘটনার পরদিন ৪ জুন সকালে কবিরহাট থানায় এ ঘটনায় ধর্ষণ মামলা করতে গেলে ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাছান ধর্ষণ মামলা না নিয়ে শ্লীলতাহানীর চেষ্টার একটি অভিযোগ নেন। বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে পৌঁছালে তাদের হস্তক্ষেপে গত ৬ জুন একটি গণধর্ষণ মামলা নেন ওসি। মামলা নথিভুক্ত করতে বাদীর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী। আসামিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের গ্রেফতারে গড়িমসি করার অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
বাদী আরও অভিযোগ করে বলেন, আমার স্ত্রীর ইজ্জত হরনের মামলা করতে ওসি সাহেব খরচের কথা বলে আমার থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু ঘটনার ৮-৯ দিন পেরিয়ে গেলেও কোন আসামিকে গ্রেফতার করেন নি।
তিনি আরও বলেন, গত সোমবার বিকালে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি আবুল কালাম, গিয়াস ও সোহেলকে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করতে দেখে ওসিকে ফোন করলে তিনি আসামি ধরতেছি ধরব বলে কালক্ষেপণ করছেন। বাদীর অভিযোগ পুলিশ আসামিপক্ষের সঙ্গে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করার কারণেই আসামিরা গ্রেফতার হচ্ছে না। এদিকে আসামিরা ফোনে তাকে মামলা করায় ভয়ংকর পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকার হুমকি দিয়েছে। মামলা করে এখন আমি চরম বেকায়দায় রয়েছি। তিনি দ্রুত আসামিদের গ্রেফতারের দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে কবিরহাট থানার ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাছানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আসামিরা এলাকায় নেই। তাই তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছেনা। তবে পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। মামলা নথিভুক্ত করতে টাকা নেওয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করে এ কর্মকর্তা বলেন, অভিযাগ করতেই পারে তবে তা কতটুকু সত্য তা দেখা উচিত।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো: আলমগীর হোসেন বলেন, পুলিশ কোন মামলা রেকর্ড করতে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তারপর ধর্ষণ মামলার বাদীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। যদি এমন ঘটনা ঘটেই থাকে তবে ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ জনগণের সেবক ও রক্ষক। এখানে রক্ষক হয়ে বক্ষকের ভূমিকা কেউ পালন করলে তাকে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩জুন বিকালে নোয়াখালীর সুবর্নচর উপজেলার চর বৈশাখী গ্রাম থেকে জমি কেনার উদ্দেশ্যে কবিরহাট উপজেলার পূর্ব নবগ্রামে স্থানীয় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আসেন ওই দম্পতি। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তারা আত্মীয়ের বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় সমাজ কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামের নেতৃত্বে ৬-৭ জন গৃহবধূর আত্মীয়ের বাড়িতে হানা দেয়। ঘরে ঢুকেই ওই দম্পতির মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক থাকার কথা বলে তাদের বিয়ের কাগজপত্র দেখতে চান। এক পর্যায়ে ওই দম্পতিকে জোর পূর্বক ঘর থেকে তুলে বাড়ি থেকে দূরে নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা টাকা ও ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাদের একটি খোলা মাঠে নিয়ে যান।
এক পর্যায়ে গৃহবধূর স্বামী ও এক আত্মীয়কে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আব্দুস সাত্তার গৃহবধূকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে তার মেয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। রাত ১২টার দিকে গৃহবধূকে নেওয়ার জন্য তার খালাতো ভাই ও তার স্ত্রী এবং স্বামী এসেছে বলে ঘর থেকে বের করে স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে (বেড়িবাঁধ) নিয়ে যায়। সেখানে নবগ্রামের আব্দুস সাত্তার, সোহেল, আবুল কালাম, রিপন, মাসুম, গিয়াস উদ্দিন ও নূর আলম তাকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করেন।