গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ছাত্রীদের উত্যক্ত ও অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে এক শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার প্রতিবেদন আগামী ৭ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে ।
জানা গেছে, উপজেলার কোটালীপাড়া এস এন ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক মিলন হোসেন ৮ বছর আগে বিদ্যালয়টির বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগের পর থেকেই তিনি ছাত্রীদের উত্যক্ত ও অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। একাধিক ছাত্রীকে উত্যক্ত ও অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে বিদ্যালয়টিতে একাধিকবার সালিশ বৈঠকও হয়েছে।
সর্বশেষ গত বুধবার (২৪ জুন) কলেজ পড়ুয়া ওই বিদ্যালয়টির সাবেক এক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি ওই ছাত্রী তার অভিভাবকদের জানালে তারা ঘটনাটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আতিকুজ্জামান বাদলকে জানান। তিনি গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভা ডেকে শিক্ষক মিলন হোসেনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এ সভা থেকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আতিকুজ্জামান বাদল বলেন, মিলন হোসেন এই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই একাধিক ছাত্রীকে উত্যক্ত ও অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন। এ বিষয় নিয়ে বিদ্যালয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। মিলন হোসেন মেধাবী শিক্ষক হওয়ার কারণে এতোদিন তাকে বিদ্যালয়ে রেখেছি। তাকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে সংশোধন হয়নি। তাই তাকে আমরা সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যদি সে দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবো।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য রতন মিত্র বলেন, তদন্তে প্রাথমিকভাবে শিক্ষক মিলনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আগামী বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, আমার মেয়েকে শিক্ষক মিলন দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। বিষয়টি আমি মৌখিক ভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে জানিয়েছি। শিক্ষকের কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা লাভ করবে। সেই শিক্ষকই যদি ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেয় তাহলে আমরা এসব শিক্ষকদের কাছ থেকে ভালো কি আশা করতে পারি।
এ বছর এসএসসি পাশ করা এক ছাত্রী বলেন, নির্বাচনী পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে স্যার মিলন হোসেন আমাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি বিষয়টি তখন কয়েকজন শিক্ষককে জানিয়েছিলাম। শিক্ষকগণ তখন মানসম্মানের দিকে তাকিয়ে আমাকে চেপে যেতে বলেছিলেন।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, মিলন হোসেন ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে শিক্ষক সুলভ কোনো আচরণ করেন না। এছাড়া তার বিষয়ে আমার আর বেশি কিছু বলার নেই।
বিষয়টি ষড়যন্ত্র দাবি করে শিক্ষক মিলন হোসেন বলেন, ভালো শিক্ষক হিসেবে এলাকায় আমার একটি সুনাম রয়েছে। যে কারণে আমাকে বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটি আমার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরনের খারাপ লোক বিদ্যালয়ের রাখা ঠিক না। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তার প্রতিবেদন পাওয়ার পরে আমরা মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো