হাঁটু পানিতে হাঁটাহাঁটি, ভোগান্তি চরমে

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-30 16:41:53

‌'একনা ঝড়ি (বৃষ্টি) হইলেই হামার এ্যটে আস্তা (রাস্তা) তলে যায়। হাঁটু পানিত হাঁহাহাঁটি করা নাগে। ড্রেন নাই দেকি এই দুর্ভোগ নাগি আছে। মেয়র, মেম্বার সবায় জানে, কিন্তু কায়ো এই আস্তাত ড্রেন বানে (তৈরি) না দেয়। এভাবেই আক্ষেপ থেকে কথাগুলো বলছিলেন বাবুল মিয়া।

বাবুল মিয়া রংপুর নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাহিগঞ্জ ডিমলা কানন গোটলা বৈরাগীপাড়ার বাসিন্দা। প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েই হাঁটু পানিতে নামতে হয় তাকে। উপায় নেই বলেই হাঁটু পানি পার হতে হয় তাকে। বাবুল মিয়ার মতো ওই এলাকার প্রায় সহস্রাধিক মানুষ প্রতিদিন পানিতে ভিজে যাতায়াত করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আদি শহর মাহিগঞ্জের বৈরাগীপাড়ার ওই রাস্তাটি পানিতে থৈ থৈ করছে। সেখানে পানি নিষ্কাশনে কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন বয়সী মানুষ এই ময়লা পানিতে যাতায়াত করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈরাগীপাড়ার রাস্তা ধরে মসজিদ, মন্দির ও মাদরাসা রয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই পথ ধরে চলাচল করে। নোংরা ও দূষিত পানির গন্ধে প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়ছেন স্থানীয় মুসল্লিরা। এছাড়াও পানিতে ছোট ছেলে-মেয়েদের চলাচলে বেড়েছে দুর্ভোগ। কখনো কখনো রিকশা ও বাইসাইকেল আরোহীরা সেখানে পড়েও যায়। পানি জমে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু বৃষ্টির পানি নয়, আশপাশের বাসা-বাড়ির পানিও রাস্তায় জমে থাকে। ড্রেন না থাকায় দিন দিন দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়লে রাস্তার কোলঘেষা বাড়িতেও পানি জমে। বিষয়টি লিখিতভাবে কয়েকবার স্থানীয় কাউন্সিলরকে অবগত করার পরও কোনো অগ্রগতি নেই। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় মুদি দোকানি মঙ্গল মহন্ত বলেন, মন চায় রাস্তায় নৌকা দিয়ে চলাচল করি। প্রায় সাত-আট বছর ধরে মানুষ এই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। একটা ড্রেনের জন্য মানুষ কতবার আবেদন করেছে। শুধু আশ্বাস দেয়, কিন্তু কাজ হয় না। এভাবে বছরের বেশির ভাগ সময় হাঁটু পানিতে চলাফেরা করতে হচ্ছে।

 সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা

শচীন ও নিলু মহন্ত নামে স্থানীয় দুই ব্যক্তি জানান, রাস্তাটি নিচু হওয়াতে এবং ড্রেন না থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এতে করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা ছাড়াও এলাকার মানুষদের কষ্ট করে পানি পার হতে হয়। এনিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে। বছরের পর বছর পার হচ্ছে, কিন্তু এখানে একটা ড্রেন তৈরি হচ্ছে না।

স্থানীয় রাবেয়া ও সুফিয়া বলেন, আমরা চরম বিপদে রয়েছি। ড্রেন না থাকার কারণে বৃষ্টি হলেই পানিতে রাস্তা তলিয়ে যায়। এক রাতের বৃষ্টিতেই একেবারে বন্যার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। রাস্তায় হাঁটু পানি জমে গেছে। বাড়িতে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। পানিতে কাপড় চোপড় সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই।

এব্যাপারে জানতে রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুক্তার হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকাতে যে ড্রেনটি নির্মাণ করা হয়েছে, তার কিছু অংশ এখনও বাকি রয়েছে। পানি জমে থাকা রাস্তাটি দিয়ে বাকি অংশটুকু নির্মাণ করা হবে। এটি না হওয়া পর্যন্ত দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর