করোনা রোগীদের প্রকৃত বন্ধু ফয়সাল
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সেচ্ছাসেবক ইমতিয়াজ আহমেদ ফয়সাল। বয়স ২০ বছর। হাসপাতালের পাশেই গুলশান পাড়ায় তার বাড়ি।
গত তিন থেকে চার বছর ধরে হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। কিন্তু কখনও ডিউটি ফাঁকি দেননি।
হাসপাতালে রোগীসহ সকলের কাছে প্রিয় একটি ছেলে ফয়সাল। তাকে চেনে না হাসপাতাল চত্বরে এমন কম মানুষই রয়েছে।
সাদামাটা মনের ফয়সাল হাসপাতাল থেকে নিদিষ্ট কোন বেতন না পেলেও রোগীদের চিকিৎসায় ডাক্তারদের সহযোগীতা করে সারাদিন ১০০/১৫০ টাকা পায়। আর তাতেই তিনি মাহাখুশি।
ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের ইনজেকশন, ক্যাথেটার, নাকে খাবারের নল এবং অক্সিজেন লাগানোসহ হাসপাতালের নানা ধরণের কাজ ফয়সালের নিয়মিত ডিউটি।
মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ফয়সাল সংসারের হাল ধরাতে মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা করতে পারেননি। বাবা, মা, ছোট বোন ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। শত কষ্টের পরও হাসপাতালে রোগীদের সেবা করেই তার আনন্দ।
হাসপাতাল সূত্র থেকে জানা যায়, করোনাকালে হাসপাতালে দিন দিন বাড়তে থাকে করোনা রোগীর ভর্তির সংখ্যা। করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবরে অনেক সেচ্ছাসেবক হাসপাতালে ডিউটি অনিয়মিত করলেও ফয়সাল ছিল নিয়মিত। হাসপাতালের নতুন ভবনে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য খোলা হয় আইসোলেশন ইউনিট।
দায়িত্ব পরায়ণ হওয়ায় করোনা রোগীরদের সেবার জন্য আইসোলশনে প্রথম সেচ্ছাসেবকের ডিউটি দেওয়া হয় ফয়সালকে। যেখানে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা রাত জেগে ডিউটি করছেন তিনি। করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় হাসপাতালে যখন অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তখন করোনা ইউনিটে রোগীদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেয়া, খাবার দেয়া, ডাক্তাদের সাথে থাকা সবকিছু একাই সামাল দিয়েছে ফয়সাল।
চুয়াডাঙ্গায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ১৯ মার্চ। হাসপাতালে করোনা রোগীর সেবা করায় ফয়সালের বাড়ি লকডাউন করে দেয় প্রশাসন।
করোনা রোগীদের সেবা করেও যেন মহাবিপদ করে ফেলেছেন ফয়সাল। প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন সকলের কাছে কম কথাও শুনতে হয়নি তার।
বাড়ির বাইরে ফয়সালের পরিবারের কেউ বের হলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকে। তবে দিন শেষে ফয়সাল আবারও ফিরেছেন হাসপাতালের করোনা রোগীদের সেবায়।
সেচ্ছাসেবক ফয়সাল বলেন, মহামারির এই সময়ে নিজেকে মানুষের সেবায় কাজে লাগাতে পেরে আমি খুশি। করোনা রোগীদের সেবা করা নিয়ে প্রথম দিকে মা আর স্ত্রী আপত্তি জানালেও পরে তারাই আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। তবে এলাকার লোকজন, পরিচিতরা অনেকেই আজ আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। সিভিল সার্জন স্যার এবং আরএমও স্যার আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমি তাদের আদেশ মেনেই আমার দায়িত্ব পালন করেছি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রেখা রাণী সাহা জানান, করোনার এই সময়ে অনেক সেচ্ছাসেবক মুখ ফিরেয়ে নিলেও ফয়সাল জীবনের মায়া না করে করোনা রোগীদের যেভাবে সেবা করেছেন তা প্রশংসনীয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শামীম কবীর বলেন, হাসপাতালে অনেক সেচ্ছাসেবক থাকলেও ফয়সাল করোনা ইউনিটে ডিউটি করেছেন নিয়মিত। ফয়সালের বাবাও হাসপতালের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ফয়সালকে নিয়ে সত্যিই আমরা গর্বিত।