সুস্থভাবে জন্ম নিলেও প্রাপ্ত বয়সে এসে চলাফেরার শক্তি হারিয়ে প্রতিবন্ধী হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার টিকরামপুর গ্রামের একই পরিবারের তিনজন। প্রথমে একজন পরে ধারাবাহিকভাবে অপর দু'জন পরিণত হন প্রতিবন্ধীত্বে। হঠাৎ করে এমন অবস্থার কারণে সংসারের বোঝা হয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন তারা।
উপজেলার টিকরামপুর গ্রামের মো. সুলতান আলীর বড় ছেলে ছেলে রুবেল (২৮) ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই কাজকর্ম করে সংসারের খরচ চালিয়েছেন। বর্তমানে কর্মক্ষম ও কথা বলতে পারে না। মেয়ে মোসা. মাওয়ানজেরা (২৫) ও ছোট ছেলে (২২) মোহাম্মদ আলীও ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সে গিয়ে প্রতিবন্ধীত্ব বরণ করেন। তাদেরও নেই চলাফেরার ক্ষমতা।
চিকিৎসকরা বলছেন, নার্ভের কারণে তারা প্রতিবন্ধী হয়েছেন। তবে নিয়মিত ব্যায়াম ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ থাকা সম্ভব।
এদিকে সংসারের পাঁচজন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে অসহায় সুলতান আলীকে করতে হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি। প্রতিদিন ভিক্ষা করা টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার। জীর্ণশীর্ণ একমাত্র কুঁড়েঘরে স্ত্রীসহ তিন প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে তাকে।
প্রতিবন্ধীদের মা নূরপেশ বেগম বলেন, ‘একটি স্বাভাবিক সন্তান মানুষ করতেও খুব কষ্ট করতে হয়। কিন্তু পরপর তিনটি প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে কী পরিমাণ মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তাদের পেছনে খরচ করার মতো আয় আমাদের নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধী হলেও তাদের বোঝা হিসেবে না নিয়ে অন্যান্য স্বাভাবিক সন্তানের মতোই মানুষ করছি। সমাজের কিছু মানুষের নানা রকম কথা সহ্য করেই শত দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন পার করছি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মো. তসিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের সুচিকিৎসা ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের ব্যবস্থা করতে পৌরসভার পক্ষ থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সমাজসেবা অফিসার মোসা. উম্মে কুলসুম জানান, একই পরিবারের তিনজন প্রতিবন্ধী এটি ব্যতিক্রম বিষয়। এরইমধ্যে সমাজসেবা অধিদফতর অফিস থেকে দু’জনের ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকি তিনজনকেও ভাতার আওতায় আনা হবে।’