বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, আমাদের হৃদয়ে একদম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখতে হবে। আমরা আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা জায়গায় মাওলানাকে আগামীর অন্যতম একজন আইকন হিসেবে রেখে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) রাতে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার মাজারে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, দুই হাজার মানুষ পরিবারের সদস্যদের কথা চিন্তা না করে জীবন দিয়েছে শুধু মাত্র একটি নির্বাচনের জন্য নয়। শুধু মাত্র একটি নির্বাচনের জন্য যদি এমন কিছু হতো তাহলে বিগত ১৬ বছরে এই শুধু মাত্র নির্বাচনের জন্য সকল মানুষ এক সাথে রাজপথে নেমে যেতো। এই মানুষ এক সাথে নেমেছে যখন খুনি শেখ হাসিনার করাপ্টেড প্রত্যেকটি সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মানুষ প্রত্যেকটি জায়গায় গিয়ে নিজের সাধারণ যে মৌলিক যে অধিকারগুলো সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষ যখন সাধারণ একটি সেবা পেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছিল। মানুষকে টাকা দিতে হতো, সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হতে হতো, তখন এই সামগ্রিক সিস্টেমগুলোর বিরুদ্ধে মানুষ ছাত্র-জনতা এক সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমেছিল। তাহলে এই অভ্যুত্থানে একটি নুন্যতম ডিমান্ড হচ্ছে ওই ধ্বংস হওয়া সিস্টেমগুলো মিনিমাম একটি সংস্কার করা। এখন বাংলাদেশের যে কোনো রাজনৈতিক দল যদি তাদের জায়গা থেকে মনে করে এই ধ্বংস হওয়া নির্বাচন ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাগুলো রয়েছে। এই গুলো ছয় মাসে সংস্কার করা সম্ভব তাহলে আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি যে তারা অবশ্যই এখনো তাদের যে বিবেক বোধের জায়গায়টুকু সেটুকু যতটুকু বহিঃপ্রকাশ প্রত্যাশা করি ততটুকু তারা তা করছেন না। এইটুকু তারা তাদের জায়গা থেকে করেনি বলেই ১৬ বছরে যে সমাধানটি রাজনৈতিক ভাবে হওয়া দরকার ছিল যে খুনি হাসিনার পতন রাজনৈতিকভাবে হওয়া দরকার ছিল সেই খুনি হাসিনার পতন হয়েছে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
আমরা আমাদের এই জায়গা থেকে মনে করি আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তিন-চার পাঁচ বছরও ক্ষমতায় থাকার কথা বলছি না। কিন্তু কেউ যদি বলে ছয় মাস, এর মতো অযৌক্তিক কোন কথা আর হতে পারে না। আমার একটি নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য শুধু কি একটি নির্বাচন কমিশন দরকার এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে আমার একটি স্বচ্ছ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দরকার যে তার দায়িত্বগুলো ঠিক মতো পালন করবে। সেই জায়গায় যদি কোন অপকর্ম হয় কেউ যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য আমার একটি বিচার ব্যবস্থা দরকার এবং এই সামগ্রিক বিষয় গুলোর জন্য আমার দেশের মানুষ এখন দ্রব্য মূল্য নিয়ে কিংবা বাজারে গেলে ঠিক মতো কেনাকাটা করতে পারে না সিন্ডিকেট গুলোর হাত বদল হয়েছে সিন্ডিকেটের মধ্যে নিজেদের দলে দলে এখন নিকোজিশন হয়ে এই কালপিড গুলোকে উত্থান না করে মানুষের মধ্যে ঠিক মতো বাজার করার যে ক্ষমতা সেটি তৈরি না করে আমরা কিভাবে নির্বাচনের গল্প নেই। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি অবশ্যই ছয় মাস যেমন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটি সময় আবার তিন চার পাঁচ বছর একটি দীর্ঘমেয়াদি একটি সময়। আমরা চাই নিদিষ্ট একটি যৌক্তিক সময়ে এই সিস্টেম গুলো একটি একটি আস্থা যোগ্য সংস্কার হোক। এবং এর পরবর্তীতে অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার ক্ষমতায় আসুক।
নতুন রাজনৈতিক দলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে আমার জায়গা থেকে আমি মনে করি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তো ছাত্রদের যৌক্তিক একটি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল তখন আমরা পুরো বাংলাদেশে ছাত্রদের সাথে কানেক্ট হওয়ার চেষ্টা করছিলাম অনেক ক্ষেত্রে হয়েছিলামও কিন্তু আমাদের এই আন্দোলন শেষ হয়েছে ছাত্র জনতার আন্দোলন দিয়ে। জনতাকে কানেক্ট করা আমাদের কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যারা আমাদের এই অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে তাদেকে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি ফ্যাসিস্ট কিংবা ফ্যাসিস্ট দোসররা যে কোন সময় আবার পাল্টা আঘাত করতে পারে। এই আঘাত মোকাবেলা করার জন্য এই অভ্যুত্থানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদেরকে একটি প্লাটফর্মে এসে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। এই জায়গা থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি নাগরিকদের গুছানোর যে কাজটি সেকাজটি পুরো বাংলাদেশ ব্যাপী করছে। আর এই তরুণ প্রজন্ম যেখানে বিগত সময়ে ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে যেই তরুণ প্রজন্ম ওই খুনি হাসিনার পতন ঘটিয়েছে তারা রাজনৈতিক দল গঠন করবে কি না এটা বাংলাদেশের মানুষ নির্ধারণ করবে। কিন্তু আমরা আমাদের জায়গা থেকে বিশ্বাস করি যে তাদের একত্রিত হয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল থাকা উচিত। যখন বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল দুইটার জায়গায় চারটা হবে তখন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মানুষের জন্য কাজ করার যে প্রতিযোগিতা সেটি বৃদ্ধি পাবে। একদল আরেকদলকে প্রতিপক্ষ মনে করা নিজেদের মধ্যে নিকোজেশন করা কিংবা ডিল করে একবার এ ক্ষমতায় আসবে, এ ক্ষমতায় আসবে এই চর্চা থেকে বের হয়ে আসার জন্যও আমাদের বাংলাদেশে নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ আরও রাজনৈতিক দল দরকার। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ এই সমর্থনটি যদি তাদের জায়গায় থেকে জানায় ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ ভাবে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবে তাহলে অব্যশই বাংলাদেশে আবার নতুন কোন রাজনৈতিক দল হয়তো খুব দ্রুতই দেখা যাবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিম সরকার, বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক মনিরুল ইসলাম, আল আমিন, নবাব আলী, কামরুল ইসলাম, আল আমিন সিয়ামসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।