দুঃসহ ফেরিঘাট, বেশি ভোগান্তি নারী ও শিশুদের

ঢাকা, জাতীয়

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 17:37:00

কলকাতা থেকে ঢাকার পথে, রাজবাড়ি: দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্টে পৌঁছার আগ থেকেই প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত গাড়ির দীর্ঘ জট৷ আন্তর্জাতিক রুটের গাড়ি হওয়াতে লাইন ধরতে হয় না। তবে শ্যামলীর সৌহার্দ্য বাস যখন ঘাটে এগিয়ে যাচ্ছিল, পাশের যাত্রীবাহী বাসগুলোর জানালা দিয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত যাত্রীদের চেহারা চোখে পড়ল। ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা ধরে এই অবস্থায় রয়েছে যাত্রীবাহী বাসগুলো। আধঘণ্টা বা বিশ মিনিট পরপর একটু একটু করে ঘাটের দিকে এগোচ্ছে বাস। জিরো পয়েন্টে আসার পর থেকে ঘাট অনুযায়ী বাসগুলোর মুখ ঘুরিয়ে দেয় হচ্ছে।

৫ ও ৬ নং ঘাট ভিআইপি হলে কি হবে সেখানেও রয়েছে দীর্ঘ জট। স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যস্ত বাসগুলোকে নিয়ম মেনে পথে জায়গা করিয়ে দিতে৷

এদিকে দীর্ঘ সময় বাসে বসে থাকতে থাকতে অনেক যাত্রীই ধৈর্য্য হারিয়ে নিজেরাই ফেরি পার হচ্ছেন। মাদারীপুর থেকে আসা যাত্রী রবিউল হাসান বাস ছেড়ে দিয়ে নিজেই ফেরি পার হচ্ছেন। তিনি বার্তাকে বলেন, ৪ ঘণ্টা ধরে বাসে বসে ছিলাম। এখন যে জট দেখছি তাতে আরো ২ থেকে ৩ ঘন্টা লাগবে। সঙ্গে থাকা ৩ বছরের বাচ্চাটার কষ্ট হচ্ছিল। তাই বাস ছেড়ে দিলাম৷ এখন ঘাট পার হয়ে দেখি লোকাল বাস ম্যানেজ করে হলেও চলে যাব।

ফেরিঘাট ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ জটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নারী ও শিশুরা। বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের চালক মোস্তাক বলেন, গত ৬ ঘণ্টা ধরে যানজটে বাস। ঈদের পর সবাই পরিবার নিয়ে ঢাকা ফিরছে। এমন সময় যানজট আর গরমে যাত্রীদের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে শিশুদের নিয়ে বাবা মায়েদের ভোগান্তি চরমে। শিশুদের জন্যে খাবার তৈরি করতে পারছেন না। গরমে শিশুরা কান্নাকাটি করছে।

এছাড়াও পথে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল না হওয়াতে দীর্ঘ সময়ে সকলেই অস্বস্তিতে রয়েছেন। টয়লেট ব্যবহারে পুরুষদের চেয়ে নারীদেরই অসুবিধা হচ্ছে বেশি।

শ্যামলী পরিবহনের চালক সুলেমান বলেন, ফেরিতে উঠলেও দীর্ঘ ভীড় থাকায় টয়লেট ব্যবহার করতে পারছেন না নারীরা। আবার শিশুরা দীর্ঘ সময় গাড়িতে বসে ক্লান্ত হয়ে কান্নাও করছে। নদীতে অতিরিক্ত স্রোত এবং গাড়ির অতিরিক্ত চাপের তুলনায় ফেরির সংখ্যা কম হওয়াতেই এই জটের সৃষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বাহন ছেড়ে ২৫ টাকা টিকেট করে যারা ফেরি পার হয়ে যাচ্ছেন তারা বলছেন, এই সময় একবারে ফেরি পার হওয়ার বাস না নিয়ে ভেঙে গেলে ভাল। বাস স্টেশনে নেমে রিকশা বা ভ্যান নিয়ে ঘাটে এসে ফেরিতে উঠে পড়লে ভাল হয়। এরপর নদী পার হয়ে আবার গাড়িতে উঠে পড়লে সময়ও বাঁচবে।

দীর্ঘ জোটের কারণে ঘাটের রুটি ও চায়ের দোকানগুলো বেশ জমজমাট৷ দীর্ঘ যাত্রায় ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় দোকানগুলোতে।

যশোর থেকে ঢাকাগামী যাত্রী শিমুল বলেন, এ যাত্রা দুঃসহ। ঈদের সময় যান এবং মানুষের ভীড় থাকেই। সঠিকভাবে পূর্ব পরিকল্পনা হলে আর এমন ভোগান্তি হতো না মানুষের। আমার বাস দুপুর ১ টায় দৌলতদিয়া পৌছালেও ফেরিতে উঠতে উঠতে সন্ধ্যা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর