দীর্ঘ চার বছর ধরে গরুটিকে খাইয়েছে শিশু চাঁদনি। প্রতিদিনই গরুটিকে পরম মমতায় আদর-যত্নও করেছে সে। কিন্তু শিশুটির হতদরিদ্র বাবা এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা মূল্যের আদরের এ গরুটিকে এক লাখ নয় হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
বুধবার (২৯ জুলাই) বিকেলে গরুটি বিক্রির সময় পাশে ছিল চাঁদনি। সে কিছুতেই গরুটি বিক্রি করতে চাইছিল না। কিন্তু তার বাবা সব বুঝেও শুধু সংসারের প্রয়োজন মিটানোর জন্য গরুটি বিক্রি করে দেন।
গরু বিক্রির প্রক্রিয়া দেখেই চাঁদনির বুক যেন ফেটে চৌচির হয়ে যায়। বারবার সে দেখছিল অবুঝ প্রাণিটিকে। গরুটিও চুপচাপ দেখছিল তাকে।
গরুর ক্রেতা যখন গরুটিকে নিয়ে যেতে চাইছিল তখনই ঘটল বিপত্তি। চাঁদনি হাউমাউ করে অঝোরে কাঁদতে শুরু করল। দৃশ্যটি দেখে মর্মাহত হন পশুরহাটে আসা অন্য ক্রেতা বিক্রেতারাও।
বুধবার (২৯ জুলাই) বিকেলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা সদরের কুরবানির পশুরহাটে এ ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, কলমাকান্দা উপজেলার বড়দল গ্রামের বাসিন্দা চিত্ত পালমা। তিনি চার বছর বয়সের এ গরুটি তার বাড়িতে লালন পালন করে বড় করে তুলেছেন। তার আট বছর বয়সী ছোট্ট মেয়ে চাঁদনি পালমার এই চার বছরে গরুটি সাথে মমতার সম্পর্ক গড়ে উঠে। বাবার পাশাপাশি চাঁদনি নিজ হাতে প্রতিদিন খাওয়াতো গরুটিকে। কিন্তু টাকার প্রয়োজনে গরুটির প্রতি তৈরি হওয়া চাঁদনির সব ভালোবাসাই বির্সজন দিতে হল।
চিত্ত পালমা জানান, সকালে যখন গরুটি নিয়ে পশুরহাটে রওনা দেই। আমার মেয়েও তখন গরুটির পিছু পিছু হাটে ছুটে আসে। সে কিছুতেই গরুটি বিক্রি করতে রাজি ছিল না। কিন্তু কি করব। অভাবের সংসারে টাকার প্রয়োজনে গরুটি কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। গরুটি বিক্রি করে দেয়ায় আমার ছোট্ট মেয়েটি অনেক কান্নাকাটি করেছে।
গরুটির ক্রেতা একই উপজেলার রানীগাঁও গ্রামের বাসিন্দা নয়ন মিয়া জানান, কুরবানির জন্য এক লাখ নয় হাজার টাকায় চিত্ত পালমার ষাঁড়গরুটি ক্রয় করেছি। ছোট্ট মেয়েটি অনেক কাঁদছিল। তারপর তাকে অনেক বুঝিয়ে গরুটি নিয়ে এসেছি। মেয়েটি খুব ভালোবাসতো গরুটিকে।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কাজল তালুকদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গরুটি বিক্রির সময় মেয়েটির কান্না দেখে আমারও চোখে পানি এসে পড়েছিল। ছোট্ট মেয়েটির মনে গরুটির প্রতি ভালোবাসার যে বহিঃপ্রকাশ দেখলাম সত্যিই তা বিরল।