জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে আ. লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে
'এখনো কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এখনো বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।'
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার আয়োজনে ‘নবীন চোখে গণঅভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এমনটাই মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হতে পারিনি। এমন একটা সময়ে আমরা দায়িত্ব পেয়েছি যখন বাংলাদেশ একটা ধ্বংসযজ্ঞের মতো পরিস্থিতিতে ছিল। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের চিকিৎসা ও পূনর্বাসনে আমরা অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি এবং নিচ্ছি। আন্দোলনে শতাধিক শিক্ষার্থীর চোখের মধ্যে ছররা গুলি ঢুকেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ জনের চোখের ভেতর থেকে সফলভাবে স্প্রিন্টার বের করা হয়েছে। ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা করা হয়নি। তখন সরকারী অনেক মেডিকেল কলেজে বলেও দেওয়া হতো যাতে তাদের চিকিৎসা না দেওয়া হয়। অনেকেই তখন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সেখানে অনেকে জমি জাগয়া বিক্রি করেও চিকিৎসা খরচ চালিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এখনো কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এখনো বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের কথা বলে আওয়ামী লীগকে আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার নানা ধরনের চক্রান্ত হচ্ছে। আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধের কথা যখন সরকারে পক্ষ থেকে আমরা বলি রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকেই তখন তাদের বক্তৃতায়, কথায় বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করছেন। ডেমোক্রেসির কথা বলে বিভিন্ন দূতাবাসগুলো থেকে চাপ দেয়ার চেষ্টা করছে যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে না কিংবা নির্বাচন থেকে তাদেরকে দূরে রাখা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাকে জার্মান একজন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে। সেটা কি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি কি না? আমি বলেছি, আপনারা নিজেরাই ১৯৪৫ সালে ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এবং নাৎসি পার্টি এখনো নিষিদ্ধ অবস্থায় আছে। সেখান থেকেই বুঝা উচিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কি পরিণতি হওয়া উচিৎ।
দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, আহতদের চিকিৎসার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা আমাদের প্রথম প্রয়োরিটির মধ্যে ছিল। বাংলাদেশ প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। সেইরম একটা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করে আমরা যেন দেউলিয়াত্বের দিকে না যাই সেই বিষয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষার্থীরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন এবং জুলাই-আগষ্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে বিপ্লবী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা লাকি, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. লুৎফুল এলাহী, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন রুনু। আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এম মাহফুজুর রহমান ও প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম প্রমুখ।