'বানের পানিতে হামার ঈদও ভাসি গেল'

, জাতীয়

আমিনুল ইসলাম জুয়েল, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পীরগাছা (রংপুর) | 2023-08-22 06:04:27

'৫ দিন আগত বান্দ (বাঁধ) থাকি বাড়িত আসছিনো। বুধবার সকাল থাকি বানের পানি হঠাৎ বাড়ি গেইছে। এখন ফির বানের পানি ঘরত ঢুকছে। বানের পানিতে হামার ঈদও ভাসি গেল'। এসব বলছিলেন পীরগাছা উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী গাবুড়া গ্রামের রেহেনা বেগম।

তিন দফা বন্যার কবলে পড়েছেন ৫০ বছর বয়সী এই নারী। প্রথম দুই দফা বাড়িতে পানিবন্দি অবস্থায় কাটালেও তৃতীয় দফায় পারেননি। পানির তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পানি কমে যাওয়ায় অনেকের মতো তিনিও বাড়িতে ফেরেন। কিন্তু গত বুধবার সকাল থেকে তিস্তার পানি আবারো বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েন।

শুধু রেহেনা বেগম নয়, আকস্মিক তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের পীরগাছায় দুইটি ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের মানুষ ফের পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী লোকজন।

শুক্রবার (৩১ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছাওলা ইউনিয়নের কিশামত ছাওলা, গাবুড়া, জুয়ান, রামশিং, শিবদেব , হাগুরিয়া হাশিম ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের রহমত চর গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বুধবার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার কমতে শুরু করে। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে আবারো পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় বিপাকে পড়েছে এসব বাসিন্দারা।

এর আগে তৃতীয় দফা বন্যার পানি সরে যাওয়ায় নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়া লোকজন আবারো বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করে। অনেকে নিজ বাড়িতে ঈদ উদযাপন করার স্বপ্ন দেখছিলেন।

হাগুরিয়া হাশিম গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন, 'বানের পানি বাড়ছে আর কমছে। একবার আশ্রয় নিবার জন্য বান্দত যাই, ফির বাড়িত আসি। এমন করি হামার দিন যাবার নাগছে। কাজ-কাম নাই। ঘরতও খবার নাই। হামার তো ঈদও নাই। বানের পানি সউগ ভাসি নিয়ে গেইছে'।

শিবদেব চরের আবুল হোসেন বলেন, তৃতীয় দফার বন্যায় পরিবারসহ বাঁধে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। পানি কমে যাওয়ায় অনেকের মতো আমিও বাড়িতে ফিরেছি। ভেবেছিলাম বাড়িতেই ঈদ উদযাপন করতে পারবো। কিন্তু সেটা আর হলো না। তিস্তার পানি নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে। বানের পানিতেই ঈদ কেটে যাবে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, তিস্তায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর