বাউল সাধক লোককবি জালাল খাঁ’র ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নেত্রকোনা | 2023-09-01 11:53:08

‘ও আমার দরদী, আগে জানলে তোর ভাঙ্গা নায় আর চড়তাম না’ ‘আরে ও ভাটিয়াল গাঙ্গের নাইয়া, ঠাকু ভাইরে কইও আমায় নাইয়র নিতো আইয়া’ ‘সেই পাড়ে তোর বসতবাড়ি, এই পাড়ে তোর বাসা,’ ‘দয়াল মুর্শিদের বাজারে, কেহ করে বেচাকেনা, কেহ কান্দে রাস্তার পড়ে’ ‘ধন্য বলি তারে আপন দেশে বসে যেজন চিনতে পারে আপনারে’

এ রকম অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা দেশের অন্যতম একজন বাউল সাধক ও লোককবি জালাল উদ্দিন খাঁ। তার ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার (৩১ জুলাই)। ১৯৭২ সালের এই দিনে পরলোকগমন করেন তিনি।

প্রতি বছর দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ঘটা করে পালন করা হলেও এ বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তবে দিবসটি উপলক্ষে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের সিংহেরগাঁও গ্রামে জালাল উদ্দিন খাঁ’র সমাধি প্রাঙ্গণে পরিবারের পক্ষ থেকে সীমিত পরিসরে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

জালাল উদ্দিন খাঁ ১৮৯৪ সালের ২৫ এপ্রিল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আসদহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অবশ্য পরে তিনি একই উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের সিংহেরগাঁও গ্রামে স্থায়ী নিবাস গড়ে তুলেন। ১৯৭২ সালের ৩১ জুলাই সিংহেরগাঁও গ্রামেই মারা যান জালাল খাঁ। তার পিতা সদর উদ্দিন খাঁ নিজেও একজন কবি ছিলেন। পিতার কাছ থেকেই জালাল কবিতা ও গানের প্রতি আকর্ষণ অনেকটা পেয়েছিলেন। স্কুলে পড়ার সময় তার কাব্যপ্রতিভার উন্মেষ ঘটে। তখনই তিনি মুখে মুখে গান বেঁধে তা গাইতেন। তবে গান ও তত্ত্বের চর্চায় তিনি পুরোপুরি নিজেকে নিবেদন করেন ১৯২২ সালে পত্নী ইয়াকুতুন্নেসার আকস্মিক মৃত্যুর পর।

শোকার্ত ও উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় তিনি ময়মনসিংহ ও সিলেট এলাকার পির-ফকির-বাউলদের সঙ্গে সময় কাটাতে থাকেন। এক সময় চট্টগ্রামের বিখ্যাত সুফি সাধক সৈয়দ আবদুল কুদ্দুস সাহেবের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন। চিশতিয়া তরিকার এই সাধক বিশ শতকের প্রথম দিকে পূর্ব ময়মনসিংহ এলাকায় একটি বিশাল ভক্তগোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন। এই সাধক-পুরুষের কাছ থেকেই জালাল ইসলাম ধর্মের সুফি পন্থা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন এবং ‘ওয়াহিদাতুল ওয়াজু’ পন্থী সুফি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হন।

প্রথম জীবনে তিনি সমসাময়িক বাউলদের সঙ্গে অনেক বড় বড় আসরে তত্ত্ববিচারমূলক গান করেছেন। কিন্তু ১৯৫০-এর দশক থেকে আসরে উঠে গান গাওয়া ছেড়ে দেন এবং পুরোপুরি গান লেখা ও তত্ত্বচর্চায় মনোনিবেশ করেন। তেরোটি তত্ত্বে তিনি নিজের গানকে বিন্যস্ত করেছিলেন। এখানে আত্মতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব, নিগূঢ় তত্ত্ব, দেহতত্ত্ব ইত্যাদি পারমার্থিক বিষয় যেমন রয়েছে, তেমনি আছে প্রাত্যহিক জীবনের সমস্যা ও মানবিক আবেদনে জারিত লোকতত্ত্ব, দেশতত্ত্ব, ভাটিয়ালি ও বিরহতত্ত্ব। গানের সংকলন "জালালগীতিকা"র চারটি খণ্ড তিনি নিজেই বের করে গিয়েছিলেন।

"বিশ্বরহস্য" নামে একটি প্রবন্ধের বইও বের করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর "জালালগীতিকা পঞ্চম খণ্ড" প্রকাশিত হয়। এসব বই একত্র করে ২০০৫ সালে "জালালগীতিকা সমগ্র" বের করা হয়। অধ্যাপক যতীন সরকার বইটি সম্পাদনা করেছেন। এছাড়া আব্বাস উদ্দীন আহমদ, আবদুল আলীমসহ অনেক বিখ্যাত শিল্পী গেয়েছেন জালাল খাঁ’র লোকপ্রিয় অনেক গান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর