জমি প্রস্তুত করেও বীজ সংকটে আলু রোপন করতে পারছেন না কিশোরগঞ্জের কৃষকরা। সংকট এতটাই যে অতিরিক্ত দাম দিয়ে হলেও কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে কৃষকদের। বীজের অধিক দাম ও সংকটে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে এই সংকট আরো তীব্র হচ্ছে।
এছাড়াও গত বছরের তুলনায় বাজারে সব ধরনের সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় আলু উৎপাদনে খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সামনের বছর ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম অনেক বেশি থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার অন্য দেশ থেকে আলু আমদানি করলে লোকসান গুণতে হবে কৃষকদের।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ভালো জাতের বক্স আলু প্রকাশ্যে পাওয়া যাচ্ছে না, যারা পাচ্ছেন তারা কয়েক গুণ বেশি দামে ক্রয় করছেন। নেদারল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত (বীজ সংরক্ষণ) আলু বীজ (৫০ কেজি) প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, গত বছর যার দাম ছিল আট থেকে ১০ হাজার টাকা, ডায়মন্ড জাতের আলু বীজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। বিগত বছর দাম ছিল ২৭০০ থেকে ৩০০০ টাকা, বগুড়া লাল আলু মণ প্রতি বীজ ৩৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা।
জানা গেছে, এ উপজেলার মাটি আলু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় দিন দিন আলুর আবাদ বাড়ছে। পৌর সদরসহ উপজেলার নয়টি ইউনিয়নেই কম বেশি আলুর আবাদ হয়ে থাকে, আমন ধান কাটার পরই আলু রোপনের জন্য কৃষক জমিতে কাজ শুরু করেন। আলু রোপনের আগে জমিতে প্রচুর সার ব্যবহার করতে হয়। এ উপজেলায় বছরে ১৩২০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়ে থাকে। যা থেকে প্রায় ২৬ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়। এখানকার উৎপাদিত আলু এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি হয়।
এ অঞ্চলের কৃষক ডায়মন্ড জাতের আলুর আবাদ বেশি করে থাকেন। বগুড়া লাল গুটি জাতের আলুর আবাদও হয়। এছাড়াও আগাম জাতের আলু বারী ৭২ ও স্পীড আলুর আবাদ হয়ে থাকে। আগাম আলু ৬০ থেকে ৬৫ দিনেই খাবার উপযোগী হয়। ভালোভাবে পরিচর্যা করলে প্রতি বিঘা (৩৫ শতক) জমিতে ১০০ থেকে ১২০ মণ আলু উৎপাদন হয়। বীজ আলুর আবাদও এখানকার কৃষক করে থাকে। এ অঞ্চলে আলু সংরক্ষণের জন্য সরকারি, বেসরকারি তিনটি কোল্ড স্টোর রয়েছে।
উপজেলার বড় আজলদী গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, অস্বাভাবিকভাবে বীজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কী করবেন ভেবে উঠতে পারছেন না, আলু চাষের জন্য সার, কীটনাশক ও চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। ফলনের পর ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন তারা৷
বিএডিসির ডিলার মো. এরফান উদ্দীন জানান, ভালো মানের বীজের সঙ্কট রয়েছে, আগের বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়তি দাম দিয়েও বীজ পাওয়া যাচ্ছে না, পাশাপাশি সব ধরনের বীজ, সার, কীটনাশকের দাম আগের বছরের তুলনায় বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর-ই-আলম জানান, উপজেলা প্রশাসন আলু বীজ নিয়ে কারসাজি রোধে কাজ করছে। এজন্য কৃষকদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কোথাও আলু বীজের অতিরিক্ত দাম চাওয়া হলে, উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।