দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মী ও জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। শনিবার (২০ মার্চ) দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা শেষে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বর্ণ্যাঢ্য রাজনৈতিক জীবন স্মরণ করা হয়। সভা মনে করে তাঁর মৃত্যুতে শুধু বিএনপি নয় সমগ্র দেশ একজন অভিজ্ঞ, দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান এবং মুক্তিযোদ্ধা-গণতান্ত্রিক নেতাকে হারালো। তাঁর মৃত্যুতে দেশে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হবার নয়। সভায় মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।
সভায় বিএনপি’র অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী তাঁর কর্মজীবনে সেনাবাহিনীতে এবং কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দেন। সভা মনে করে যে, তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন সত্যিকারের দেশ প্রেমিক যোগ্য রাজনীতিককে হারালো এবং যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হবার নয়। সভায় তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।
সভায় সুনামগঞ্জ জেলাধীন শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রামে ভাংচুর, লুটপাট এবং হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সভা মনে করে যে, অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ, এবং অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন, চিরাচরিত পদ্ধতিতে সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা নিচ্ছে এবং বিরোধী দলের ওপরে দায়ভার চাপানোর অপচেষ্টা করছে। এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবার সকল দায় অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। গণ-মাধ্যমে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে সত্য প্রকাশিত হয়েছে যে, আওয়ামী যুবলীগ নেতার উসকানিতে এবং নেতৃত্বে এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে। সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নিতাই চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে একটি দল আক্রান্ত গ্রাম পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করার সন্তোষ প্রকাশ করে। অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয় এবং দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের বিরোধী দলের ওপর দোষারোপ করা থেকে বিরত থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করবার আহ্বান জানানো হয়।
সভায় পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে সরকারি মদদপুষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়াতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। চাল, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
সভায় অতি সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে অতীতের মতো এ পর্যায়ের সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণেই সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। সভায় দলের সকলস্তরের নেতা-কর্মী ও জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।
সভায় করোনায় আক্রান্ত নেতা-কর্মীদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নেতৃত্বে ইতিপূর্বে গঠিত ট্যাস্কফোর্স সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।
সম্প্রতি পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১৭ মার্চ হতে ২৭ মার্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক ও সকল সামাজিক সমাবেশ, সভা, মিছিল নিষেধাজ্ঞা বিষয়টি উত্থাপন করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণের জন্য পুনরায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে কর্মসূচির প্রস্তুতি চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত হয়।