বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। একাধিকবার নির্বাচনে যেয়ে তা বুঝতে পেরেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। যার জন্য নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় নিরেপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি দলটির। আর এ দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান নিয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে নতুন নতুন ফাঁদ ফেলা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের আর কোনো ফাঁদে পা দিবে না বলে সোজাসাপটা জানিয়েছে দলটি।
২০২০ ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে এনে নরুল হুদা কমিশনের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এ ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পর কোনো আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। প্রথমে হুদা কমিশনের অধীনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। পরে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর পর থেকে সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছে দলটি। সিদ্ধান্তের বাইরে যেয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তৈমুর আলম খন্দকারকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিএনপির সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বিএনপির একটি বিশ্বস্ত সূত্র বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বিএনপি আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাচ্ছে না। এটা নিশ্চিত; এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না। এ সিদ্ধান্ত এসেছে গত সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাবাহী কমিটির সিরিজ বৈঠকে থেকে। সেখানে সবার মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখন বিএনপির এক দাবি, তা হচ্ছে নির্দলীয় নিরেপক্ষ তত্বাবধায় সরকার। এর বাইরে কিছু ভাবছে না।
তত্বাবধায়ক সরকারে দাবির প্রতি অনড় থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার বর্জন করে বিএনপি। রাষ্ট্রপতির সংলাপের আহ্বানেও সাড়া দেয়নি। সংলাপকে অর্থহীন বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। সংলাপে অংশ নেয়া থেকে জোট ভুক্ত দলগুলোকে বিরত রেখেছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বার্তা২৪.কমকে বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য, জনগণের স্বাধীন মতামতের প্রতিফলন ঘটতে পারে না। জনগণের স্বাধীন মতামতের প্রতিফলনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত বা ক্ষমতার পালাবদল ঘটবে না। এটা আজ ধ্রুব সত্য। সে কারণে রাষ্ট্রপতির সংলাপ আমরা বর্জন করেছি। একই সাথে সার্চ কমিটির আহ্বানও আমরা বর্জন করেছি।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব৷ এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করব। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হবে এবং তাদের মাধ্যমে আবার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার গুলোর নির্বাচনে এই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তাই মনে করি, এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সকলের গ্রহণযোগ্য, একটি অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক পার্লামেন্ট ও সরকার প্রতিষ্ঠাই বর্তমান সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ।
তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে ঘরে বসে নেয় মাঠের প্রধান বিরোধী দল। দাবি আদায়ে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কষছে নতুন নতুন পরিকল্পনা৷ করোনার বিধিনিষেধ মাঠে তৎপরতা দেখা না গেলেও নানামুখী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর মাধ্যমে সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বন্ধু দেশকে চিঠি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি বিরোধীদের নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্যের প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ধাপে ধাপে নাগরিক সমাজের সঙ্গেও যোগোযোগ করবে। একটি কমন ইস্যূতে সবাকে ঐকমত্যের আনার চেষ্টা করছে।