ক্ষমতায় থাকতে পোস্ট নেই তবুও প্রমোশন দেওয়া হচ্ছে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 19:57:11

ক্ষমতায় থাকার জন্য বাহিনী বাড়ানো হচ্ছে, পোস্ট নেই কিন্তু প্রমোশন দেওয়া হচ্ছে। গাড়ি-বাড়ি দেওয়া হচ্ছে শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) হোটেল ইম্পেরিয়াল মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জিএম কাদের বলেন, মানুষের জান-মালের কোন নিরাপত্তা নেই। গণমুখী সরকার হলে জনগণকে বাঁচাতে চেষ্টা করতো। গণমুখী সরকার হলে মানুষ যাতে দুমুঠো খেয়ে জীবন বাঁচাতে পারে সেই চিন্তা করতো। আমরা রেশনিং এর ব্যবস্থা করতে বলেছি। কিন্তু মাসে এক বা দুইবার কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহ করছে। এতে মানুষের খুব কম চাহিদা মিটছে।

তিনি বলেন, কেউ সত্য কথা বললে তখন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করা হয়। সত্য বললে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কণ্ঠরোধ করতে হয়রানি করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের কথা হচ্ছে, জনগণই দেশের মালিক। তারাই সরকার নির্বাচিত করবে। সরকারের সমালোচনা করা আমাদের অধিকার নয়, এটা আমাদের দায়িত্ব। সরকার সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না করলে, সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা থাকতে হবে সাধারণ মানুষের। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। এখন প্রশ্ন হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র আছে?

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা সারা বছর ঈদের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। ঈদের আয় দিয়ে তারা সারা বছর সংসার চালান। নিজের সকল পুঁজি, স্বল্প সময়ের জন্য উচ্চ হারের সুদে টাকা নিয়ে ঈদের বাজারের জন্য মালামাল কেনাকাটা করেন। হঠাৎ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সকল দোকান ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ৪ হাজারের ওপরে দোকান পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন দুই হাজার কোটি টাকার মালামাল পুড়ে একদিনেই তারা ফকির হয়ে গেছে। দুর্যোগে যারা কষ্ট পাচ্ছেন আমরা তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। পাশাপাশি সরকারের কাছে আবেদন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। দরকার হলে বিনা সুদে অথবা স্বল্প সূদে তাদের ঋণ দিতে হবে।

জিএম কাদের বলেন, আমরা সাহায্য দিতে বলেছি, দেখা যাবে এমন লোককে সাহায্য দেওয়া হচ্ছে এখানে যার দোকানই ছিল না। যারা সরকারি দল করেন তারাই সাহায্য ও ঋণ পাবেন। আবার যার ঋণ দরকার তিনি পাবেন না। অথবা ঋণ পেতে হলে অর্ধেক টাকা ঘুষ হিসেবে দিতে হবে। গেল বছর কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক সংখ্যাক মানুষ মারা গেছেন। অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন। আমরা দাবি করেছিলাম, দুর্ঘটনাকে স্বাভাবিক ঘটনা মনে না করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? গেল বছর ২৪ হাজার অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারের মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হয় না।

তদন্ত কমিটি গঠন হয় কিন্তু তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কারো শাস্তি হয়েছে বলে আমরা জানি না। ৪ মার্চ চট্টগ্রাম রি-রোলিং মিলে অক্সিজেন প্লান্ট বিস্ফোরণে ৪ জন মারা গেছেন, সাইন্সল্যাব এলাকায় গত ৫ মার্চ ৫-৬ জন মারা গেলো। আবার ৭ মার্চ সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে অনেক মানুষ মারা গেলো। এগুলো যদি দুর্ঘটনা হয় তাহলে ভবিষ্যতে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে হাজার কোটি টাকার মালামাল ধংস হয়ে গেলো, এর দায়-দায়িত্ব কার ? আগামীকাল যে এমন দুর্ঘটনা ঘটবে না তার কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে? কোন প্রাণহানি হয়নি, কিন্তু প্রাণহানির চেয়েও খারাপ অবস্থা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই, সম্পদের নিরাপত্তা নেই। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তা ও জীবন মানের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। সেজন্যই দেশের মানুষ সরকারকে দেশ চালাতে টাকা পয়সা দেয়। সরকারের তাদের বাড়ি. গাড়ি, থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করে দেশের গরিব মানুষ। সরকার দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের পরিবর্তে নিজেদের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত। পুলিশসহ সকল বাহিনীর লোক বাড়ছে, জনবল দ্বিগুণ করা হচ্ছে। তারপরও কেন এত আগুন লাগবে? এত ক্ষয়ক্ষতি হবে? কেন চুরি-ছিনতাইয়ের শিকার হতে হবে? কেন সরকারি দেলের নেতৃবৃন্দের দ্বারা সাধারণ মানুষ অপমানিত হবে? আপনাদের উন্নয়ন হবে, দেশে-বিদেশে বাড়ি হবে এজন্য তো আমরা আপনাদের রাখি নাই। দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে।

জিএম কাদের বলেন, দেশের রিজার্ভ শেষ করার কারণে টাকার দাম কমে গেছে। সরকারের হাতে টাকা নেই। রফতানি আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। ব্যয় কমানোর কারণে বাজারে মালামালের অভাব চলছে, কাঁচামালের অভাব দেখা দিয়েছে। কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মেডিকেলে ইকুপমেন্ট পাচ্ছে না। আবার প্রয়োজন মত বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। রিজার্ভ কমলো কেনো ? সরকার বিভিন্নভাবে খরচ করেছে, বিভিন্ন প্রকেল্পে অপরিকল্পিত ভাবে ঋণ করেছে। দেশের ধনী মানুষেরা ট্যাক্স দেয় না, গরিব মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে। ব্যাংকেও টাকা নেই, ব্যাংকের টাকা পাচার হয়ে গেছে। এখন নতুন করে টাকা ছাপানো হচ্ছে। এ কারণে, টাকার দাম আরেক দফা কমছে। টাকার দাম কমলেই ডলারের দাম বেড়ে যাবে। ডলারে দাম দেড়শো থেকে দুশো হতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর