নির্বাচন নিয়ে আমরাও শঙ্কিত: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-21 17:09:40

নির্বাচন নিয়ে আমরাও শঙ্কিত। দুটি দল মুখোমুখি হলেই বড় ধরনের সহিংসতা হতে পারে। দেশ ও জাতি ধ্বংসের পথে চলে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাপার বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পেশাজীবী সমাজের এক সভায় বক্তৃতাকালে এ মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, দুটি পক্ষ যেভাবে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের মাঝে সহিংসতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। একটি দলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, তারা জিততে না পারলে যেনো তাদের মৃত্যু হবে, তাই তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। আবার ক্ষমতায় না থাকতে পারলে ভবিষ্যতে বর্তমান সরকারের দুর্গতি হবে এই ভেবে সরকারি দল ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। জেদ ও স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশকে ধংস করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রকে নিজম্ব ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছে। রাষ্ট্র, সরকার এবং দল যখন এক হয়ে যায় তখনই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু হয়ে যায়। সরকারি কর্মকর্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরকারি দলের পক্ষে কথা বলছে। তারা সরকারি দলের সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। সরকারকে ভোটের ব্যাপারে সাহায্য করছে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই, সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি দলের নেতা-কর্মী এবং মন্ত্রীদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সরকার ও সরকারি দল এক হয়ে রাষ্ট্রকে দখল করার মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। তাই সামনের দিকে কঠিন সংগ্রাম অপেক্ষা করছে, আমাদের সেই সংগ্রামে জিততে হবে। আমরা কারো পক্ষ বা বিপক্ষ নয়, আমরা জনগণের পক্ষের শক্তি।

তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি আইনে যে কোন সংবাদকেই সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য করতে পারবে। আইনটি গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। বাক স্বাধীনতাকে বাধা দেয়া হলে গণতন্ত্র থাকতে পারে না। গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা করতে পারবে সাইবার সিকিউরিটি আইনে। এখন গণমাধ্যমে সেলফ সেন্সরশীপ চলছে, আগামী কোন সেন্সর দরকার হবে না। কারণ, গণমাধ্যম কোন সংবাদই করতে পারবে না। এতে সকল নিউজ চ্যানেল বন্ধ হবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। নিউজের পরিবর্তে টেলিভিশনে গান-বাজনা ও নাটক চলবে, কেউই আর সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না।

তিনি বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্র চর্চা করার পরিবেশ নেই। দেশ এখন একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে মানুষের বাক স্বাধীনতা, ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে জনগণই দেশের মালিক। জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার গঠন করে। মালিক হিসেবেই জনগণ যদি সরকারের সমালোচনা করতে না পারেন, তাহলে সরকার রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজ করলে তা ঠেকানোর উপায় কী?

তিনি বলেন, জনগণ যদি সরকারের সামলোচনা না করতে পারে সেখানে আর গণতন্ত্র থাকতে পারে না। সরকারের সামলোচনাকে এখন রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা কখনোই এক নয়। আইন করে যদি কথা বলার অধিকার বন্ধ করে দেয়া হয়, সরকার বিরোধী আন্দোলনে বাধা দেয়া হয় তখন আর গণতন্ত্র থাকেনা।

পেশাজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পেশাজীবীরা দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। রাজনীতিতে এলে দক্ষ কারিগর হিসেবে দেশের কল্যাণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয়করণের মাধ্যমে পেশাজীবীদের রাজনীতিতে এনে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা পেশার দিকে খেয়াল না করে দলীয় কাজ-কর্মে বেশি মনোনিবেশ করছে। ফলে সাধারণ মানুষ পেশাজীবীদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না। পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে সৃষ্টি করে প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। জাতীয় পেশাজীবী সমাজ দলীয়করণের বিরুদ্ধে কাজ করবে।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির টানাটানিতেই প্রমাণ হচ্ছে জাতীয় পার্টি ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জাতীয় পার্টিকে পাশে পেতে চাচ্ছে। দল দুটি ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে গেছে। একটি দল ক্ষমতায় যেতে চায় আর অপরটি ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তাদের চিন্তা শুধু ক্ষমতা নিয়েই। দেশের জনগণের কথা তারা ভাবে না।

জাতীয় পেশাজীবী সমাজের সভাপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডাঃ মোস্তাফিকুর রহমান আকাশর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপি প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান খলিল, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন খান, দফতর সম্পাদক-এমএ রাজ্জাক খান, যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক প্রমুখ। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর