তৈরি পোশাক শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নিয়ে তামাশা চলছে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-11-09 16:28:30

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, তৈরি পোশাক শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নিয়ে তামাশা চলছে। বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় প্রস্তাবিত মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা কিছুই না।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর ) এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

তিনি তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বলেন, অভিযোগ আছে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন দমন করতে মাত্রাতিরিক্তি বল প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে অনেক হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন দমন করতে শক্তি প্রয়োগ সভ্য সমাজে অগ্রহণযোগ্য।

আন্দোলনরত শ্রমিক আঞ্জুয়ারা খাতুনের মৃত্যুতে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা ও মজুরি বৃদ্ধির দাবি মেনে নিতেও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, গেল মাসে সর্বনিম্ন মজুরি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৩ হাজার করার দাবিতে প্রবল আন্দোলন শুরু করে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা। কয়েক দফা বৈঠকের পর শ্রমিকরা ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা সর্বনিম্ন মজুরি দাবি করেন। কিন্তু মালিক পক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। পরবর্তীতে সরকারের সহায়তায় শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয় মালিক পক্ষ। এই প্রস্তাব না মেনে আবারো আন্দোলনে নেমেছে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা। রফতানি শিল্পের শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা নিয়ে নির্দয় আচরণ চলছে। যে শ্রমিকরা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তারাই সবচেয়ে বেশি মানবেতর জীবন যাপন করছে। দেশের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখা শ্রমিকদের সাথে অমানবিক বৈষম্য চলছে।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে দিন অথবা নিত্যপণ্যের দাম কমান। শুরু থেকেই তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের খুবই সামান্য বেতন দেওয়া হতো। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে তাদের বেতন নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। অথচ, ওই সময় শ্রমিকরা সর্বনিম্ন ১৬ হাজার টাকা বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছিলো। ২০১৮ সালের প্রবল শ্রমিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পুনরায় শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার টাকা। দফায় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ১২ হাজার ৫০০ টাকায় একটি পরিবারের খাবার খরচই অসম্ভব। এমন বাস্তবতায় তারা বাসা ভাড়া, চিকিৎসা, পোশাক ও শিশুদের লেখাপড়া চালাবে কীভাবে?

তিনি বলেন, গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র সর্বশেষ গবেষণায় জানা গেছে, বাংলাদেশে ৪ সদস্যের একটি পরিবারে শুধু মাসিক খাবার খরচ ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এই গবেষণার পরেও কয়েকদফা দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের। মালিকপক্ষ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতার যে অজুহাত তুলে শ্রমিকদের স্বল্প বেতন দিতে চাচ্ছে তা সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। উৎপাদন বাড়িয়ে হলেও শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক অভুক্ত রেখে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার যৌক্তিকতা মধ্যযুগীয় দাস প্রথার বর্বরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

এমন বাস্তবতায় তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আবারো মেনে নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর