নির্বাচন প্রশ্নে উভয় সংকটে জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-11-15 20:44:46

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা প্রশ্নে উভয় সংকটে রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। নির্বাচন বর্জন করলে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে বড় একটি অংশ থেকে যাবে নির্বাচনে। আর অংশ নিলে আমেরিকার ভিসা নীতির ভয় তাকে তাড়া করে ফিরছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা হলে এমন উভয় সংকটের কথা জানিয়েছেন তারা। এমনকি ১৪ নভেম্বর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় খোদ চেয়ারম্যানও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

জিএম কাদের ওই সভায় বলেছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে কি না তা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে নানাভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। যখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাই, তখনই পিছুটান আসে। কিন্তু সরকার দল ভাঙতে পারছে না। আমার অনুরোধ, যে সিদ্ধান্ত নেব, সবাই সে সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। হয়তো সবার মতামতের প্রতিফলন নাও হতে পারে। রাজনীতিতে আবেগের মূল্য দিলে পথভ্রষ্ট হতে হবে, বাস্তবতাকে মূল্য দিতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের চিঠির প্রসঙ্গে তুলেছেন। সেই চিঠিতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে ভিসানীতি প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। আমরা কি সেই দায় নেবো!

নির্বাচন প্রশ্নে ভেবে চিন্তে পা ফেলতে চায় জাতীয় পার্টি। অনেকেই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আলামত দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। ২০১৪ সালে নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিল করার পর হঠাৎ করেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে রওশনের নেতৃত্বে ৮৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে থেকে যান। একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন বিশাল ক্ষমতা ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি নেতাদের নির্বাচনে যাওয়া ঠেকাতে পারেননি, জিএম কাদের সে তুলনায় কিছুই না। অনেক নেতাই চান যেকোনো ভাবে এমপি নির্বাচিত হতে। আবার রওশন এরশাদ আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন নির্বাচন করার বিষয়ে। বেশিরভাগ নেতাই দুই দিকে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

রওশনপন্থী বলে পরিচিত সাবেক ছাত্রনেতা অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, আমি মনে করি জিএম কাদের ও তার স্ত্রী ছাড়া সকলেই নির্বাচনে যাবে। প্রায় সকলেই ম্যাডামের (রওশন এরশাদ) সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছেন। জিএম কাদের কাউকেই আটকাতে পারবে না।

জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগুচ্ছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে খুব গোপনীয়তার সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিএনপি নির্বাচনে এলে এক ধরণের আর না এলে বিকল্প ভাবনা রাখা হচ্ছে। একটি প্রভাবশালী দেশ এতে দূতিয়ালি করছে। এজন্য জাতীয় পার্টি কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ আসন চেয়েছে। সরকারের দিক থেকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রওশন এরশাদ। সরকারের আস্থাভাজন রওশন ২০১৪ সালের নির্বাচনের আসন ধরে ৩৫টি আসন চেয়েছেন। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০ জনও পরে ১৪ জন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসেন। রওশন এরশাদ একটি তালিকাও দিয়ে এসেছেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রথম নির্বাচনী জোট গঠন করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে। তখন জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ৪৯ আসনের দাবি ছিল। এর মধ্যে ৩২টি আসনে দেওয়া হয় আর ১৭টি আসন উন্মুক্ত রাখা হয়। এতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৭টি আসনে বিজয়ী হন। আর গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ, সব মিলিয়ে ২৭৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। এরমধ্যে জোটগতভাবে ২১টি আরও উন্মুক্ত থেকে একটি আসনে বিজয়ী হয় জাতীয় পার্টির প্রার্থী।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, আমরা এখনও নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। আমরা এখনও জানি না দেশের পরিস্থিতি কি হবে। নির্বাচন আদৌ হবে কিনা। তবে সময় এলে সিদ্ধান্ত নেবো, নির্বাচনে অংশ নেবো কিনা। যতক্ষণ ঘোষণা না দিয়েছি, ততক্ষণ নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, জাতীয় পার্টির নির্বাচন করার সমস্ত প্রস্তুতি রয়েছে। প্রার্থী বাছাই, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি, ফরম ছাপানো সব রেডি রয়েছে। কিন্তু কথা হচ্ছে নির্বাচনের পরিবেশ দেখছি না। গত ৫ বছরে যে সব নির্বাচন হয়েছে অনেক জোর জবরদস্তি করা হয়েছে, প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। জোর করে সিল মারা হয়েছে। এতে করে নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। জেলা কমিটির নেতারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর