দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেই হয়তো এমপি হবেন এমন ধারণা ছিল অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে। কিন্তু সেই চিন্তা পাল্টে গেছে গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনার এক ঘোষণার মধ্য দিয়ে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে বাধা নেই এবং দলীয়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না এমন ঘোষণায় অনেক আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছেন।
পটুয়াখালী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আফজাল হোসেন।
তবে পটুয়াখালী-১ (সদর উপজেলা, দুমকি উপজেলা, মির্জাগঞ্জ উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পটুয়াখালী সদর উপজেলা ও পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. সুলতান আহম্মেদ মৃধা। আলোচনায় রয়েছেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও পটুয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. তারিকুজ্জামান মনি। তারিকুজ্জমান মনি পটুয়াখালী-১ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য এড. শাহজাহান মিয়ার মেঝ পুত্র।
এ বিষয় জানতে চাইলে এড.সুলতান আহম্মেদ মৃধা বলেন, আমি নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে চাই না। তবে আমি যেন নির্বাচনে অংশ নেই সে জন্য আমার নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের চাপ রয়েছে। তাদের কথা রাখতে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া লাগতে পারে। তবে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।
এছাড়া এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান পটুয়াখালী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.বি.এম রুহুল আমিন হাওলাদার। গত ২৭ নভেম্বর তার পক্ষে পটুয়াখালী জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
পটুয়াখালী ২ (বাউফল ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাত বারের সংসদ সদস্য বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ।
এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেতায় গুঞ্জনে রয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি হাসিবুর রহমান তালুকদার। তিনিও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এছাড়া গত কয়েক বছর তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিভিন্ন কার্যক্রমেও সক্রিয় ছিলেন।
পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এস এম শাজহাদা। এস এম শাহজাদা আওয়ামী লীগের রাজনীতির মাঠে তেমন কোন রিচিতি না থাকলেও সাবেক সিইসি নুরুল হুদার ভাগ্নে হিসেবে দেশের রাজনীতিতে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন।
এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট জেনারেল মোঃ আবুল হোসেন। তিনি এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন।
পটুয়াখালী-৪ আসন (কলাপাড়া উপজেলা-রাঙ্গাবালী উপজেলা) আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমান মহিব।
এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদার। ইতিমধ্যে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা শুরু হয়েছে।
আলোচনায় রয়েছেন এই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম এর পুত্র আব্দুল্লাহ আল ইসলাম লিটন। এছাড়া এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন রাঙ্গবালী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. জহিরুল উদ্দিন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের খবরে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের কপালে অনেকটাই চিন্তার ভাজ পরেছে।
অনেকেই দুশ্চিন্তায় সুষ্ঠু ভোটে অনেক আসনে ভোটের হিসাব নিকাশ পাল্টে যেতে পারে।সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন আওয়ামীলীগের এই কৌশলে নির্বাচনের আমেজ কিছুটা হলেও ফিরে আসতে পারে। এর ফলে নির্বাচনের মাঠে সাধারণ ভোটারদের গুরুত্ব বাড়বে।
তবে এমন পরিস্থিতিতে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আবারও চাঙ্গা হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।
পটুয়াখালী শহরের কলাতলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল হয়েছে মনোনয়ন পত্র দাখিল হইতেছে কিন্তু মানুষের মধ্যে নির্বাচন লইয়া কোন শীত গরম দেহি না। কিন্তু ২৬ তারিখ প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন হরতে পারবে হেইপর পরিস্থিতি কিছুটা পালডাইয়া গেছে। অনেকেই নির্বাচন লইয়া আলোচনা করছে। ভেটের পরিবেশ ভালো থাকলে কেন্দ্রে ভোট দিতে যামু।