দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮৮ আসনের বিপরীতে জাতীয় পার্টির ৩০৪ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। একই আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়া হয়েছে এমন আসনের সংখ্যা ১৮টি, আর চেয়ারম্যানসহ ৪ জন নেতা দু’টি করে আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে দফতর সূত্র জানিয়েছে।
নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে নির্বাচনে আসা জাতীয় পার্টি ২৯৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেন। দলীয় টিকিট পেলেও ৬ জন প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। মনোনয়নপত্র জমাদান থেকে বিরত থাকা প্রার্থীরা হলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান সিলেট-৪, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহমুদুল করিম কক্সবাজার-২, জাতীয় কৃষক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ওমর ফারুক চাঁদপুর-৫, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খুররম ভূঁইয়া কিশোরগঞ্জ-২, মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জয়নাল আবেদীন মুন্সীগঞ্জ-২ এবং ফজলুল করিম নোয়াখালী-১। মনোনয়ন না দেওয়া আসনগুলো হচ্ছে শেরপুর-২, ফরিদপুর-২, গোপালগঞ্জ-৩, সুনামগঞ্জ-২, চট্টগ্রাম-১১ ও লক্ষীপুর-৪ আসন।
অন্যদিকে পার্টির চেয়ারম্যানসহ ৪ জন নেতা দু’টি করে আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। জিএম কাদের রংপুর-৩ ও ঢাকা-১৭, কো-চেয়ারম্যান যমুনা গ্রুপের কর্ণধার সালমা ইসলাম ঢাকা-১ ও ১৭, প্রেসিডিয়াম সদস্য সফিকুল ইসলাম সেন্টু ঢাকা-১০ ও ১৪ এবং চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইকবাল হোসেন তাপস বরিশাল-২ ও ৫ আসনে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী ৮ জন্য নারী নেত্রী নির্বাচনী দৌড়ে সামিল হয়েছেন। তাদের মধ্যে একাদশ সংসদের এমপি রয়েছেন ৩ জন (১ জন সরাসরি ভোটে অন্য দুইজন সংরক্ষিত আসনের এমপি)। নেত্রীরা হলেন- কো-চেয়ারম্যান যমুনা গ্রুপের কর্ণধার সালমা ইসলাম এমপি ঢাকা-১ ও ১৭, চেয়ারম্যানের সহধর্মীনী ও পার্টির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শেরিফা কাদের এমপি ঢাকা-১৮, প্রেসিডিয়াম সদস্য রত্না আমিন হাওলাদার এমপি বরিশাল-৬, নুরুন্নাহার ঠাকুরগাঁও-২, মনিকা আলম ঝিনাইদহ-১, আসমা আশরাফ নেত্রকোনা-২, খোসনেয়ারা কক্সবাজার-১ ও জোনাকি মুন্সী কুমিল্লা-১০।
ছেলের আসন নিয়ে টান দেওয়া এবং অনুসারীদের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায় ২৯ নভেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান রওশন এরশাদ। এ নিয়ে প্রকাশ্য নানা কথা বলা হলেও পার্টির মধ্যে এক ধরণের অস্বস্তি কাজ করছে বলে জানা গেছে। দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি সরকারের ওপর আস্থার সংকটে ভুগছে জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা মনে করেন ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ কোন নির্বাচনেই প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি আওয়ামী লীগ। নানাভাবে তাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। উপনির্বাচন, উপজেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কোথাও ছাড় দেওয়া হয়নি। অনেক সময় জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে জাপার প্রার্থীদের। এবারের প্রতিশ্রুতি কতটা রক্ষা করবে সে সম্পর্কে তাদের মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যে কারণে জাতীয় পার্টি আগে ভাগেই নিশ্চিত হয়ে তারপর সিদ্ধান্ত দিতে চায়। তারা এমন কোন মাধ্যমে নিশ্চিত হতে চান যাতে, আওয়ামী লীগ আর প্রতিশ্রুতি ভাঙতে না পারে। অন্যদিকে জিএম কাদেরকেও সরকার পুরোপুরি আস্থায় নিতে পারছে না বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
২০১৪ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মনোনয়ন দাখিলের পর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে রওশনের নেতৃত্বে ৮৭ জন প্রার্থী মাঠে থেকে যায়। এবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন, এমনকি নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত অনিশ্চয়তা থাকবে। যে কোন সময় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বলে একাধিক সিনিয়র নেতা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।