৬০ আসন চায় জাতীয় পার্টি!

বিবিধ, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-12-06 03:30:48

আসন সমঝোতার প্রশ্নে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকের কথা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি, এসএমএস দিলেও সাড়া দেননি।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ১৪ দলীয় জোটের দুই শরিকের সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ১৪ দলের শরিকদের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারিত হবে। কাল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা করবে আওয়ামী লীগ।

জোটের আসন বিন্যাস ও প্রার্থী চূডান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে, মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেছিলেন ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের। তিনি বলেছিলেন, বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। ওই নির্বাচনের পরিবেশ ও আসন সমঝোতা নিয়ে মিশ্র মতামত রয়েছে দলের মধ্যে।

আসন সমঝোতার গুঞ্জন প্রসঙ্গে গত ১৮ নভেম্বর জাতীয় পার্টির মহাসচিব বার্তা২৪.কমকে বলেছিলেন, বিষয়টি পুরোপুরি সত্য না আবার মিথ্যাও না। এই মুহূর্তে এরচেয়ে বেশি মন্তব্য করতে পারছি না।

সুত্র জানিয়েছে, জাতীয় পার্টি ৬০টি আসন চায় আওয়ামী লীগের কাছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩৫ থেকে ৪০টির মতো আসনের বিষয়ে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টি আসন সংখ্যার পাশাপাশি শীর্ষ নেতাদের আসনও চূড়ান্ত করতে চায় আগে ভাগেই।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির ডোনার খ্যাত যমুনা গ্রুপের কর্ণধার সালমা ইসলাম এমপি ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির আসন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

কাজী ফিরোজ রশীদ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এ বছর আর কাজী ফিরোজ রশীদকে আসনটি ছেড়ে দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। ওই আসনে আওয়ামী লীগ সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে প্রার্থী করতে চান। জাপার ডোনার খ্যাত সামলা ইসলাম এমপির আসন ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকেই রশি-টানাটানি চলছে। ওই নির্বাচনে সালমা ইসলামকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান। পরে সংরক্ষিত কোটায় এমপি হয়ে আসেন সামলা ইসলাম। এবার আসনটি ছাড় দিতে নারাজ জাপা। অবশ্য সামলা ইসলাম ঢাকা-১ আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ আসনেও মনোনয়ন জমা দিয়ে রেখেছেন।

নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে নির্বাচনে আসা জাতীয় পার্টি ২৯৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেন। দলীয় টিকেট পেলেও ৬ জন প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। ছেলে সাদ এরশাদের আসন নিয়ে টান দেওয়া এবং অনুসারীদের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায় ২৯ নভেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান রওশন এরশাদ।

দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি সরকারের ওপর আস্থার সংকটে ভুগছে জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা মনে করেন ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ কোন নির্বাচনেই প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি আওয়ামী লীগ। নানাভাবে তাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। উপনির্বাচন, উপজেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কোথাও ছাড় দেওয়া হয়নি। অতীতে অনেক নির্বাচনে জাপার প্রার্থীদের জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবারের প্রতিশ্রুতি কতটা রক্ষা করবে সে সম্পর্কে তাদের মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যে কারণে জাতীয় পার্টি আগে ভাগেই নিশ্চিত হয়ে তারপর সিদ্ধান্ত দিতে চায়। তারা এমন কোন মাধ্যমে নিশ্চিত হতে চান যাতে, আওয়ামী লীগ আর প্রতিশ্রুতি ভাঙতে না পারে। অন্যদিকে জিএম কাদেরকেও সরকার পুরোপুরি আস্থায় নিতে পারছে না বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

২০১৪ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মনোনয়ন দাখিলের পর নির্বাচন বর্জণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে রওশনের নেতৃত্বে ৮৭ জন প্রার্থী মাঠে থেকে যায়। এবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন, এমনকি নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত অনিশ্চয়তা থাকবে বলে মনে করেন কেউ কেউ। যে কোন সময় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বলে একাধিক সিনিয়র নেতা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর