২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে সর্বশেষ প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনকে। এরপর গত ৪২ দিনে ১০ দফায় বিএনপি হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করলেও চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে কোনো মিছিল-সমাবেশে দেখা যায়নি চট্টগ্রামের এই শীর্ষ নেতাকে।
এসময়ে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে কর্মীদের নিয়ে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দ্বিতীয় সারির নেতারা। অবশেষে দীর্ঘ ৪২দিন পর প্রকাশ্যে কর্মসূচিতে এলেন ডা. শাহাদাতসহ প্রথম সারির কয়েকজন নেতা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রোববার (১০ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে চট্টগ্রামে ‘গুমের শিকার’ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বেলা ১১টার পর মানববন্ধন কর্মসূচিতে আসেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে ও মো. কামরুল ইসলামের পরিচালনায় মানববন্ধনে বিশেষ অতিথি ছিলেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিএমইউজে সভাপতি মো. শাহনওয়াজ, চট্টগ্রাম জেলা ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক, এ্যাবের সভাপতি ইঞ্জি. জানে আলম সেলিম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, ইয়াছিন চৌধুরী, আবদুস সাত্তার, কাজী বেলাল ও এম এ মান্নান, নগর মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম, নগর বিএনপি দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন, নুরুল আমিন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের পর থেকে সারা দেশে বিএনপির ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের কেউ বাসায় থাকতে পারছেন না। নামতে পারছেন না রাস্তায়। মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে সরকার। বিএনপি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভাত ও ভোটের অধিকারের কথা বলছে, এটাই অপরাধ।’
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে মানবতা ও মানবাধিকারের কোনো মূল্য নেই। আওয়ামী লীগ সরকার এখন ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হয়েছে। তারা দেশ থেকে ন্যায়বিচার দূর করে দিয়েছে। সরকার নিষ্ঠুর দমন পীড়ন চালিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন করার চেষ্টা করছে। তারা দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস শুধু একদিন নয়, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের জন্য এখন প্রতিদিনই মানবাধিকার দিবসে পরিণত হয়েছে।
শাহাদাত হোসেন বলেন, আজকে গুম, খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা তাদের কথা বলতে পারে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের সরকার রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে এমনভাবে টিকে থাকতে চায় যাতে তাদের অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দও করতে না পারে। দেশের জনগণ, সব বিরোধী দলের বিরোধিতা এবং আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান উপেক্ষা করে সরকার একতরফা প্রহসনের নির্বাচন করার আত্মঘাতী খেলায় মেতে উঠেছে। আওয়ামী লুটেরা চক্র এবং তাদের দোসররা এখন এমপি হওয়ার জন্য জনগণের কাছে নয়, গণভবনের দিকে ছুটছেন। এটা কোনো ইলেকশন নয়, বানরের পিঠা ভাগাভাগির সিলেকশন।
ডা. শাহাদাতসহ নগর বিএনপির প্রথম সারির নেতাদের ৪২ দিন পর প্রকাশ্যে কর্মসূচিতে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একজন নেতা। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২৮ অক্টোবর সর্বশেষ ঢাকার মহাসমাবেশে ডা. শাহাদাত ভাইসহ চট্টগ্রামের নেতারা যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার শুরু হলে আমরা আড়ালে থেকে নেতা-কর্মীদের কর্মসূচির দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছি।’