চট্টগ্রামে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান অতিথি রেখে সর্বশেষ ২৪ অক্টোবর বিকেলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে নগর বিএনপি কার্যালয় নাসিমন ভবনের মাঠে সমাবেশ করেছিল দলটি। এর ঠিক ৫০ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের মাঠে প্রকাশ্যে আলোচনা করেছে নগর বিএনপি।
সভাটিতে নগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনরে সভাপতিত্বে কমিটির অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ এম নাজিম উদ্দীন, নগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা একরামুল করিম, মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আবদুল মান্নান, সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহবায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, সদস্য সচিব ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নসরুল কদির, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনওয়াজ, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. এনামুল হক, চট্টগ্রাম জেলা ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক, এ্যাবের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সেলিম মো. জানে আলম প্রমূখ।
এ সময় সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। আজকে বর্তমান সরকারও একই কায়দায় মানুষের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য আওয়ামী সরকার পুলিশ দিয়ে হামলা করে বিএনপির মহাসমাবেশ পন্ড করে দিয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে শেখ হাসিনার দেওয়া তালিকা অনুযায়ী বিজয়ী ঘোষণা করতে শত কোটি টাকা নষ্ট করে নির্বাচন কমিশন আরেকটি জালিয়াতির নির্বাচন করতে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে অটোপাস নির্বাচন এবং ২০১৮ সালে রাতের ডাকাতির পর এবার আরেকটি ভাগাভাগির ডামি নির্বাচন হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও উৎসবমুখর পরিবেশের পরিবর্তে সারা দেশে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
'বিএনপির সক্রিয় নেতা ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিচার বিভাগের মাধ্যমে বেছে বেছে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোকজন ছাড়া মানুষ এখন গ্রেফতারের ভয়ে পলাতক এবং অনেক গ্রাম মানুষহীন হয়ে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে দেওয়া তালিকানুযায়ী বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করবে। গণভবন থেকে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তা নির্বাচনের রাতেই পড়ে শোনানো হবে। বর্তমান সরকার ১৯৭১ সালের হানাদার বাহিনীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।'
শাহাদাত হোসেন বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকেই অগণতান্ত্রিক শক্তি দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো হরণ করে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করেছে। আজকে আওয়ামীলীগের অধীনে নির্বাচন এখন একটি কৌতুক, প্রহসন এবং ব্যবসার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কারণ জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার ক্ষমতা হারিয়েছে। আসন বণ্টনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সহানুভূতি ও করুণায় জনপ্রতিনিধি তৈরি করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতি রাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। এভাবে মাফিয়া সরকার নির্বাচন করতে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের নামে এই খেলা কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে বানচাল করা হবে।
দীর্ঘদিন পর দলীয় কার্যালয় খোলা ও প্রকাশ্যে সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, '২৮ অক্টোবর ঢাকায় পুলিশ হত্যার ঘটনায় নেতাকর্মীদের নামে মামলার কারণে অনেকে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং দলীয় অফিসে আসতে পারেনি। এখন নির্বাচনের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় দলীয় কার্যালয় চাঙ্গা হয়েছে। তাছাড়া এতোদিন দলীয় কার্যালয়ে রাজনৈতিক সভাসমাবেশ বন্ধ থাকলেও অফিস সহকারী সবসময় অফিসে ছিল।'
২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় একজন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার পর সারাদেশের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়েরের পর থেকে বিএনপির নেতারা আত্মগোপনে চলে যায়। মূলত সেদিন থেকে মহানগর কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সরকার পতনের দাবীতে চলমান হরতাল অবকরোধেও কোন নেতাকর্মীকে দলীয় কার্যালয়ে আসতে দেখা যায়নি। তবে কিছু কিছু নেতা কর্মী মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে গত দেড়মাস অবরোধে ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশ করেছে।