অর্ধশত আসনে জোরালো প্রচারণা সীমাবদ্ধ থেকে চল্লিশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বপ্ন দেখছে জাতীয় পার্টি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২টি আসনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধীদলের আসনে থাকা দলটি।
সমঝোতায় (নৌকাবিহীন) পাওয়া ২৬ আসনের অর্ধেক নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ৪টি আসনে নিজদলীয় স্বতন্ত্র এবং কিছু আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পাত্তাই পাচ্ছে না দলটির প্রার্থীরা। বড় কোনো মিরাক্কল না ঘটলে বর্তমান সংসদের (২২টি) থেকে আসন কমে যেতে পারে বলে মনে করছে দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
খোদ পার্টির চেয়ারম্যানও নাকি ঘরোয়া আলোচনায় ১২ থেকে ১৫ আসনে বিজয়ের বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন বলে জিএম কাদের’র একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও নির্বাচন মনিটরিং কমিটির সদস্য খলিলুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোনো কথাই রাখেনি। ২৬টি আসন থেকে নৌকা সরিয়ে নিয়েছে তাতেও চালাকি করেছে। নৌকার চেয়ে অনেক প্রভাবশালী প্রার্থী রয়ে গেছে। পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে আওয়ামী লীগের লোকজন জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী রুস্তম আলী ফরাজীর পক্ষে কাজ করছে। আরও অনেক জায়গা রয়েছে এমন।
তিনি বলেন, আমাদের লোকজন মুক্তভাবে প্রচারণা চালাতে পারছে না। অনেক জায়গায় অফিসে হামলা হয়েছে, পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। নানা কারণে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ এ কথা সঠিক আমাদের অনেকটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে। আমরা পার্টির পক্ষ থেকে প্রার্থীদের কোনো রকম সহায়তা দিতে পারিনি। তারা নিজেদের মতো করে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে বুদ্ধি পরামর্শ দিতে পারলে আরও চিত্র বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
প্রার্থীরা জানিয়েছে, তাদেরকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। প্রথমত নির্বাচন করবো কি-না সিদ্ধান্তহীনতায় কেটে গেছে ১৭ দিন (৩০ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত)। এর আগেও দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করার দিনগুলোতেও পার্টি বিষয়টি ঝুলে রেখেছিল। এতে অনেকেই হাত গুটিয়ে বসে থেকে পিছিয়ে পড়েছেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬ আসনে সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি। ওই ঘোষণার পর থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন ২৬ আসনের বাইরে থাকা সাধারণ প্রার্থীরা। অনেকে মনে করছেন, তাদের অংশগ্রহণ করার বিষয়টি এখন শুধুমাত্র নির্বাচনে বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নে। সে কারণে তারা নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে প্রচারণা চালাতে রাজি নন। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক প্রার্থী পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করেছিলেন দলীয় ফান্ডের বিষয়ে। কিন্তু সাড়া না পেয়ে ক্ষোভ হতাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সাক্ষাৎ পাইনি। তাদেরকে ফোন করলেও রিসিভ করেননি। জাতীয় পার্টির ঠিক কতজন প্রার্থী এখন নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছে তার কোনো উত্তর এখন কারো কাছেই নেই। কারণ অনেকেই সরে গেছেন কোনো রকম ঘোষণা ছাড়া।
সমঝোতার বাইরে থাকা ১৮টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আশা করছে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা। জোরালো প্রচারণায় এগিয়ে থাকাদের মধ্যে ৫ জন রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য। তারা প্রত্যেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই তালিকায় রয়েছেন ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের সামলা ইসলাম, ঢাকা-৪ (শ্যামপুর-কদমতলী) আসনের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের লিয়াকত হোসেন খোকা, বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের রত্না আমিন হাওলাদার, সুনামগঞ্জ-৪ (বিশ্বম্ভরপুর-সদর) আসনের পীর ফজলুর রহমান।
সংরক্ষিত আসনের এমপি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান যমুনা গ্রুপের কর্ণধার অ্যাড. সালমা ইসলাম এবারও লড়ছেন ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসন থেকে। বিগত-২০১৮ সালের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান আওয়ামী লীগ প্রার্থী সালমান এফ রহমানের কাছে। যেই জিতুক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন ভোটাররা।
সংসদ সদস্য নন এমন যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তারা হলেন- শেরপুর-১ (সদর) মাহমুদুল হক মনি, জামালপুর-৫ (সদর) মোস্তফা আল মাহমুদ, গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ি) ইঞ্জিনিয়ার মাইনুর রাব্বী চৌধুরী রুমন, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) মো. সাইফুল ইসলাম, রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আনিসুল ইসলাম মন্ডল, রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) নূর আলম মিয়া যাদু, কুড়িগ্রাম-৪ (চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর) একেএম সাইফুর রহমান, সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) সৈয়দ দিদার বখতের নাম আলোচিত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলেও নিজ দলের স্বতন্ত্রদের কারণে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া), পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) ও নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসন নিয়ে সংকটে রয়েছে জাপা। এসব আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান এবং সাবেক সংসদ সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এর বাইরে হবিগঞ্জ-১, মানিকগঞ্জ-১ আসনসহ ৬টি আসন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে দলটি।