২৩ জুন রোববার আওয়ামী লীগ তার ৭৫ বছর পূর্তি প্লাটিনাম জুবিলি উদযাপন করবে। এই ৭৫ বছরে দলটি তার মূল লক্ষ্যে কতটা অটুট আছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত কতটা পরিবর্তন হয়েছে, দলটির ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জই-বা কী, এমন নানান বিষয় নিয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বার্তা২৪.কমের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রুহুল আমিন।
সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ও অভিন্ন। তাই, আওয়ামী লীগের যে স্বপ্ন নিয়ে প্রতিষ্ঠা, সে স্বপ্ন পূরণে এখনো কাজ করে যাচ্ছে দলটি। সেখান থেকে এক বিন্দুও সরেনি। এখন সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থায় বাংলাদেশ পড়লেও তা কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে।
বার্তা২৪.কম: আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য হিসেবে দলটির ৭৫ বছরে এসে আপনার অনুভূতি কী?
এস এম কামাল হোসেন: বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে ৭৫ বছর বয়সে এসে আমি একজন সংসদ সদস্য হয়েছি, এটা আমার বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশের যা অর্জন, তা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। সে দলের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেছি, সে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করতে পারছি, এটা একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার কাছে বিশাল পাওনা।
আমি এই কারণে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আমি বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক করেছেন এবং মহান সংসদে একজন সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
পাকিস্তান হওয়ারি আগেই বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন পাকিস্তান এই বাঙালির কোনো স্বার্থ সংরক্ষণ করবে না। পরবর্তীতে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তানের দুঃশাসন, নির্যাতন, তাদের উপনিবেশ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। মানুষ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
বার্তা২৪.কম: যে আদর্শ নিয়ে দলটির পথ চলা ৭৫ বছর বয়সে এসে সেই আদর্শ কতটা দলটির মধ্যে আছে?
এস এম কামাল হোসেন: আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল একটি অসাম্প্রদায়িক একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য।
একটি স্বাধীনতার জন্য মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের মাধ্যমে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশের আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, বঙ্গবন্ধু উপন্যাস শেখ হাসিনা সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে সে লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
বার্তা২৪.কম: আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর বয়সে সবচেয়ে বড় অর্জন কী?
এস এম কামাল হোসেন: আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন বাংলাদেশ একটি ‘উন্নয়নশীল দেশ’, ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্টবাংলাদেশ’ নির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এগুলো আওয়ামী লীগের অর্জন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আজকে পদ্মাসেতু হয়েছে। পদ্মানদীর উপর দিয়ে আজকের ট্রেন চলছে, যা মানুষ কখনো আগে ভাবেননি। কর্ণফুলী টানেল হয়েছে। সমুদ্র বিজয় হয়েছে। সীমান্ত চুক্তি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যারা ২৮ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা কেউ সীমান্ত চুক্তি করেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আজকের সীমান্ত চুক্তি হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করেছেন। আজকে দেশ স্যাটেলাইটের যুগে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, তা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের অর্জন, শেখ হাসিনার অর্জন, বঙ্গবন্ধুর অর্জন অভিন্ন!
বার্তা২৪.কম: বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে কোনো পার্থক্য দেখেন কি না!
এস এম কামাল হোসেন: আমি বিন্দুমাত্র কোনো পার্থক্য দেখি না। আওয়ামী লীগের যে নীতি-আদর্শ, তা থেকে এক চুল পরিমাণও বঙ্গবন্ধু কন্যা সরে আসেননি। দলের নেতাকর্মীদের কারণেই বিতর্কিত হতে পারে কিন্তু আওয়ামী লীগের যে লক্ষ্য অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, মানুষের অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, লেখাপড়া, চিকিৎসা সে লক্ষ্য থেকে আওয়ামী লীগ এক চুলও সরে আসেনি।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে লক্ষ্য, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, সাম্যের বাংলাদেশ সেখান থেকে এক বিন্দুও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরে যাননি।
বার্তা২৪.কম: ৭৫ বছরের আওয়ামী লীগের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
এস এম কামাল হোসেন: বিশ্বে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, সে সংকটের বাইরে কিন্তু বাংলাদেশও নয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে, আমাদের চ্যালেঞ্জ! আমাদের জন্য উচিত, বঙ্গবন্ধু কন্যার চোখের ভাষা বুঝে তিনি যা চান, সেভাবে নিজেদের তৈরি করা। সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত, জঙ্গিবাদমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার দেখছেন তিনি। আমাদের জন্য উচিত হচ্ছে, তা বাস্তবায়নে নিজেদের প্রস্তুত করা।
বার্তা২৪.কম: অনেকেই বলে থাকেন, আওয়ামী লীগে নেতা আছেন, কর্মী নেই। এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
এস এম কামাল হোসেন: এটা বলার জন্য বলা। আওয়ামী লীগ কর্মীনির্ভরশীল দল। আওয়ামী লীগ তৃণমূল কর্মীদের দল। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন, জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা ছাড়া ক্ষমতায় থাকা যায় না। সে কারণে জনগণের জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করেন। সেটা বিশ্বাস করেন বলেই আজকে শেখ হাসিনা বয়স্ক ভাতা দিচ্ছেন। বিধবা ভাতা দিচ্ছেন। যাদের ঘর নেই, তাদের ঘর দিচ্ছেন, জমি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা যা স্বপ্ন দেখেন, আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে স্বপ্ন দেখেন।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ইস্তেহার দিয়েছে। ২০১৮ সালের ইস্তেহার দিয়েছে। ২০২৪ সালেও ইস্তেহার দিয়েছেন। ২১০০ সাল বদ্বীপ পরিকল্পনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা হবে তাই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। আমাদের ঘোষণাপত্রে যা যা আছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য আজকে কাজ করছেন।
বার্তা২৪.কম: দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে জনগণের মাঝে জনপ্রিয়তা কমে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। তাহলে এখন জনপ্রিয়তা বেড়েছে না কি কমেছে?
এস এম কামাল হোসেন: আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেনি। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমেনি। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা এক ও অভিন্ন। শেখ হাসিনার জনপ্রিয় বৃদ্ধি পাওয়া মানে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়া। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত কারণে আওয়ামী লীগ বিতর্কিত হতে পারে। ক্ষোভ-বিক্ষোভ হতে পারে ওই ব্যক্তির প্রতি কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস আছে। সাধারণ মানুষেরও আস্থা ও বিশ্বাস আছে।
বার্তা২৪.কম: তৃণমূলে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক শক্তি পারিবারিক হয়ে গেছে। এটা ৭৫ বছরের আওয়ামী লীগের জন্য কতটা যুক্তিসঙ্গত?
এস এম কামাল হোসেন: ব্যক্তির আচরণ, ব্যক্তির বিনয়ের ওপর ভিত্তি করে তৃণমূলের কর্মীরা অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতি করেন। সেখানে দেখতে হবে, ব্যক্তির আচরণটা কী! ব্যক্তির কারণে কি দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নাকি ব্যক্তির কারণে নেতাকর্মীরা শান্তি পাচ্ছেন। ব্যক্তির কারণে দলে কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে।
এখানে দুটোই আছে। কারো কারো কারণে দল শক্তিশালী হচ্ছে আবার কারো কারো কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা হচ্ছে, এটা আমি অস্বীকার করি না।
দলের ৭৫ বছর বয়সে আমার অনুরোধ হচ্ছে, এখানে আমরা কেউ অপরিহার্য না। এখানে একজনই অপরিহার্য। দেশের জন্য শেখ হাসিনা, দলের জন্যও শেখ হাসিনা! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ২৪ ঘণ্টা মানুষের জন্য পরিশ্রম করছেন, আমাদের কাজ হচ্ছে, সেটা মানুষের কাছে বলা। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে কাজ করছেন তিনি, সেখানে আমাদের সহযোগিতা করা উচিত।