চট্টগ্রামে শনিবারের জনসভায় আন্দোলনের সূত্রপাত হবে: আমীর খসরু

, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-07-02 20:23:28

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রামে আগামী শনিবারের (৬ জুলাই) যে জনসভা, সেই জনসভা থেকে নির্বাচনের পরে আমরা যে আন্দোলনটা শুরু করছি, সে আন্দোলনের সূত্রপাত হবে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেল পাঁচটায় নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে শ্রমিকদলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই ঘোষণা দেন।

চট্টগ্রামের বিক্ষোভ ও সমাবেশের নতুন তারিখ ঘোষণা দিয়ে আমীর খসরু বলেন, আমাদের গত সোমবার (১ জুলাই) একটি জনসভা ছিল, বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে সেটি আগামী শনিবার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি শ্রমিকদের অনুরোধ করব, এই সভাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দুইটা বিষয় আছে। একটি হচ্ছে- দেশনেত্রী গণতন্ত্রের মা’র মুক্তি, গণতন্ত্রী মায়ের মুক্তির সঙ্গে দেশের মানুষের অধিকার অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এটাকে আলাদা করা যাবে না। এই দেশের মানুষের অধিকার এবং গণতন্ত্রের মায়ের মুক্তি এক সূত্রে গাঁথা।

দ্বিতীয়ত, চট্টগ্রামে শনিবারের যে জনসভা, সেটি থেকে নির্বাচনের পরে আমরা যে আন্দোলনটা শুরু করছি সে আন্দোলনের সূত্রপাত হবে। যেভাবে আমরা বিভাগীয় জনসভার মাধ্যমে বিগত দিনের আন্দোলন শুরু করেছিলাম পলোগ্রাউন্ড মাঠ থেকে, সে সূত্রপাত আমরা করেছিলাম। ইনশাল্লাহ, আগামী শনিবার (৬ জুলাই) আবারও নতুনভাবে আন্দোলনের সূত্রপাত হবে চট্টগ্রামের এ জনসভা থেকে।

আমীর খসরু বলেন, একজন প্রশিক্ষিত পলিটিশিয়ানের সঙ্গে আরেকজন রাজনীতিবিদের পার্থক্য অনেক বড়। যারা ট্রেইন পলিটিশিয়ান, নিজেদেরকে সেভাবে গড়ে তুলেছে। তারা রাজনীতিতে যতটুকু দিতে পারবে, যতটুকু বুঝাতে পারবে, যতটুকু মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে ও সংযোগ সৃষ্টি করতে পারবে। একজন আন-ট্রেইন পলিটিশিয়ানের পক্ষে সেটা সম্ভব হয় না। শ্রমিকদের বেলায় এই বিষয়টি অত্যন্ত প্রযোজ্য। একজন প্রশিক্ষিত শ্রমিক নেতা যেটা তার নিজেদের এবং দেশের স্বার্থে, দলের স্বার্থে করতে পারবে। একজন আন-ট্রেইন নেতার পক্ষে সেটি করা সম্ভব না। এমন না যে, করতে পারবে না। পারবে, তবে সে তার কাজ করবে।

একজন প্রশিক্ষিত শ্রমিক নেতার চিন্তা-ধারাটা সেভাবে কাজ করে। সেজন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি মনে করি যে উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে, এটা অব্যাহত রাখতে হবে। স্থায়ীভাবে এ ট্রেনিং যদি আমরা চালু করে রাখতে না পারি একসময় এটা আপনাদের মন থেকে মুছে যাবে। একইভাবে যারা রাজনীতি করে তাদেরও কিছু কিছু চর্চার দরকার। সেই চর্চা না থাকলে কিন্তু আপনি রাজনীতি করবেন, শ্রমিক নেতা হবেন। 

আমীর খসরু শ্রমিকদের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, শ্রমিকের অবস্থান বাংলাদেশের কোথায় আছে? একটু বিবেচনা করা দরকার। বাংলাদেশের শ্রমিকের সঙ্গে মালিকের যে সম্পর্ক, শ্রমিকের সঙ্গে সরকারের যে সম্পর্ক, শ্রমিকের সঙ্গে রাজনীতির যে সম্পর্ক। এগুলো একটু বিবেচনায় আনা দরকার। আপনাদের ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে অনেকগুলো অনিবন্ধিত। এগুলো নিবন্ধন হচ্ছে না কেন প্রশ্নটা তুলতে হবে শ্রমিক নেতাদের। শ্রমিক নেতাদের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক।  

তিনি বলেন, যেখানে যে শ্রমিক কাজ করবে তাদের রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে। আমি যদি ভুল করে না থাকি, শ্রমিকদের আইনগত দিক থেকে রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে। এটি একটা প্রক্রিয়া। শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ, এই প্রশ্নটা তোলা দরকার, রেজিস্ট্রেশনে সমস্যা কোথায়?

তিনি আরও বলেন, যে সমস্ত শ্রমিক নেতা গার্মেন্টস সেক্টরের সত্যিকার অর্থে দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করেছিল। তাদের অনেককে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। তাদের অনেকের বাড়ি-ঘরে হামলা করা হয়েছে। তাদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং অনেকে যারা সেই নেতৃত্বে আছেন তারা সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের যে পাওনা সেই পাওনার বিষয়ে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা কিন্তু বলেছিলাম। ২৫ হাজার টাকা গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য। শ্রমিক দলের পক্ষ থেকেও এরকম একটি দাবি-দাওয়া দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, ২৫ হাজারের অর্ধেক। কিন্তু গার্মেন্ট সেক্টরের কেউ এই দাবি আদায় করতে পারছে না। 

খসরু আরও বলেন, অথচ একটি দেশের প্রোডাকশনের যে মূল বিষয়গুলো রয়েছে তার মধ্যে শ্রমিক হচ্ছে অন্যতম। এখানে জমি আছে, মূলধন আছে কিন্তু শ্রমিক ছাড়া যে বিষয়টা আছে সেটি অসম্পূর্ণ থাকবে। শ্রমিকের কল্যাণ যত কম হবে উৎপাদন ব্যবস্থা তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং উৎপাদন ব্যবস্থাকে নিয়ে আমরা যদি একটি প্রোডাক্টিভ দেশ গড়তে চাই, জিয়াউর রহমানের যে মূল থিমটা ছিল, “উন্নয়নের রাজনীতির সাথে উৎপাদনের রাজনীতি, উৎপাদন ব্যতীত কোন দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।” এই দুটো তার স্লোগান। আমাদেরকে এ অবস্থা থেকে যদি মুক্ত পেতে হয়। তাহলে আমরা আজকে যে আন্দোলনে নেমেছি এই আন্দোলনে এ আন্দোলনে অন্য সকলের সাথে শ্রমিকের স্বার্থ গভীরভাবে জড়িত। 

আমীর খসরু বিএনপির ভিশনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আপনারা জানেন বিএনপির ভিশন-২০৩০ যেটা আছে, স্পষ্টভাবে আমরা সেখানে শ্রমিকের স্বার্থগুলো তুলে ধরেছি। আমরা যে ৩১ দফা করেছি, এই ৩১ দফা বিএনপি একা করে নাই। সবার সঙ্গে আলোচনা করে করেছি। সেখানে শ্রমিকের দাবিগুলো পরিষ্কারভাবেই বলা আছে। বাংলাদেশের সব মানুষের তাদের রাজনৈতিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য যে মৌলিক সংস্কারগুলোর প্রয়োজন আছে। সেই ৩১ দফার মধ্যে প্রত্যেকটি মৌলিক সংস্কারের জন্য বলা হয়েছে। এবং শোকের বিষয় হচ্ছে এটা বিএনপির একার কোন দাবি নয়। এটা সমস্ত বিরোধী দল অর্থাৎ বামপন্থী, ডানপন্থী, মধ্যমপন্থী সবাই কিন্তু একমত হয়ে এই ৩১ দফা প্রণয়ন হয়েছে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমান সরকারের দুঃশাসনে শ্রমিক সমাজ আজ অবহেলিত। শ্রমিকদের দুবেলা খাওয়ার সুযোগ নেই। আজকে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও বাসস্থান নেই। শ্রমিকদের বিষয়ে সরকারের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। অথচ শ্রমিকদের কারণে বাংলাদেশ টিকে আছে। সভ্যতা বিনির্মাণের কারিগর হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা। ৯০ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক সমাজের ভূমিকা আন্দোলনকে সফল করেছিল। বর্তমান ফ্যাসিস্ট ডামি সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমিকদেরকে কঠিন আন্দোলনে শরিক হতে হবে।

বিভাগীয় শ্রমিকদলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দীনের সভাপত্বিতে সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহারের পরিচালনায় সমাপনী অধিবেশনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী এড শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির নবনির্বাচিত সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ শ্রম সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও মামুন মোল্লা।

এর আগে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বিভাগীয় শ্রমিকদলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এড. শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন।

দ্বিতীয় পর্বে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয় দুপুর বারটায়। কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন চেয়ারপার্রসনের উপদেষ্টা এড শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।

এ সম্পর্কিত আরও খবর