এবারের ধাক্কা সামলাতে পারবেন না: আমীর খসরু

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনের আগের আন্দোলনে জনগণ ও নেতাকর্মীরা যত না শক্তিশালী ছিল, আজকে আমরা তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এবারের ধাক্কা সামলাতে পারবেন না।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কথায় আছে না, ‘চোরের ১০ দিন গৃহস্থের একদিন’ সেই দিন চলে এসেছে। আজকে যে দুর্দিন সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে, হাতে হাত মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শেখ হাসিনার রেজিমকে পরাজিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৬ জুলাই) বিকাল ৩টায় চট্রগ্রাম নগরের কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মেদ সড়কে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে করা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, যারা এ সরকারের পক্ষে কাজ করছে। তাদের কিছু সংবাদপত্র আছে, বুদ্ধিজীবী আছে। তারা বলছে কি জানেন! ওই ২৮ ডিসেম্বর ঢাকাতে আমাদের বিশাল জনসভা। সে জনসভায় গুলি মেরে, গ্রেনেড মেরে, টিয়ারগ্যাস মেরে ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষের জনসভা তারা সেদিন বন্ধ করে দিয়েছে। এজন্য অনেকে বলে, আন্দোলন কি আবার তাহলে নতুন করে শুরু হবে। না, আন্দোলন চলমান আছে। ওই গুলি করে, গ্রেনেড মেরে জনসভা বন্ধ করলে আন্দোলন বন্ধ করা হয় না। আর ভোট চুরি করে ডামি নির্বাচন করে কেউ যদি মনে করে, আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে অথবা বিএনপিকে নতুন করে শুরু করতে হবে। আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, নতুন করে শুরু করার কিছু নাই। আন্দোলন চলমান আছে। ভয়ে প্রধানমন্ত্রী সকাল বিকাল কি ধরনের মন্তব্য করে বুঝতে পারছেন না। কারণ ওরা জানে বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ তাদের নির্বাচন বয়কট করেছে। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচনও বয়কট করেছে। তারা জানে ওই নির্বাচন করে কোন লাভ হয়নি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, আমি একটা কথা বলতে চাই, অন্যায় যখন আইনে পরিণত হয়, প্রতিরোধ তখন অপরিহার্য। বাংলাদেশে কোন বিচার আছে? নাই। যেখানে কোন বিচার নাই এখানে প্রতিবাদ করে কোন লাভ আছে। তাহলে প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা সবাই প্রস্তুত, নেতাকর্মীরা কেউ হাল ছাড়ে নাই। ঘরবাড়ি ভেঙেছে, ব্যবসা হারিয়েছে, চাকরি গেছে, জীবন দিয়েছে মামলার পর মামলা করে যাচ্ছে। পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছে, জেলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে। কেউ হাল ছাড়ে নাই, আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে।

আমীর খসরু বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা রাস্তায় নেমেছি। যতদিন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে না ততদিন গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না, লুটপাট অব্যাহত থাকবে। বেগম জিয়ার মুক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। অনেক হয়েছে অনেক শুনেছি অনেক দেখেছি। আর সইবো না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, যারা বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে বন্দি করে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার জন্য। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে এবং সেই মামলার মাধ্যমে জেলে পাঠানো থেকে শুরু করে যারা জড়িত। সবাইকে তাদের অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে হবে। ওরা অপরাধী অপরাধ করেছে। বেগম খালেদা জিয়া কোন দুর্নীতি করে নাই। যে ট্রাস্টের কথা বলা হয়েছে, সেই ট্রাস্ট থেকে একটি পয়সা বেগম জিয়া অথবা তার পরিবারের কোন সদস্য নেয় নাই। সব টাকা ব্যাংকে জমা আছে, সুদে আসলে চারগুণ হয়েছে এখন। বাংলাদেশের কোন আইনে বেগম খালেদা জিয়ার শাস্তি হয় না। বাংলাদেশের সংবিধানে যে কথাগুলো বলা আছে সে অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার শাস্তি হয় না। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটসে পরিষ্কারভাবে বলা আছে এই অপরাধ কোন দণ্ডনীয় অপরাধ নয়।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, দেশ আজকে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্র ফিরানোর জন্য, মানবাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য, বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য যে নেত্রী স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এককভাবে আন্দোলন করেছেন। বেগম জিয়া কোন আপোষ করেন নাই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনের বিনিময়ে এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। এরপর স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। এই নেত্রী গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

‌‌‘১/১১ পরে সামরিক শাসন চালিত যে একটি সরকার ছিল। তারা নির্বাচন করেছে। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিল, তাদের অন্যায় এবং রাষ্ট্র দখলের বিষয়টা মেনে নেওয়ার জন্য। যেটি শেখ হাসিনা মেনে নিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া মানে নাই। জেল খেটেছে এখনো চার দেয়ালে বন্দী। এখন কি জন্য জেল খাটতেছেন? আরেক স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়েই। বিশ্বের ইতিহাসে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে যে সব নেতা সংগ্রাম করেছে, জেল জুলুমের শিকার হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আগামী দিনের গণতন্ত্রের ইতিহাসের তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। যারা ভোট কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, তারা ইতিহাসের আস্থা থেকে চলে যাবে।’

রফতানির ১৪ বিলিয়ন ডলার হাওয়া হয়ে গেছে উল্লেখ করে খসরু বলেন, দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। গতকালের পত্রিকায় দেখলাম, রফতানির ১৪ বিলিয়ন ডলার হাওয়া হয়ে গেছে। যা বাংলাদেশের টাকায় ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। সেটা যদি হয় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিটা হাওয়া হয়ে যাওয়ার কথা। যে উন্নয়নের রাজনীতির কথা বলতে সেটা কি আর আছে। প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ৪ এর নিচে চলে আসবে। খরচ আর জমার মধ্যে যে ঘাটতি সেটা আরও বেড়ে যাবে।