ট্রানজিট প্রদান আমাদের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে: চরমোনাই পীর

, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা | 2024-07-03 15:52:43

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম চরমোনাই পীর বলেছেন, ট্রানজিট দেয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশ কোন কিছু আদায় করতে পারেননি; বরং বিনা শর্তে এমনকি প্রায় বিনা মাসুলে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে। ট্রানজিট প্রদান আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। নিজেদের সার্বভৌমত্বের ওপরে থাকা অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পেছনে ভারতের অবদানের প্রতিদান হিসেবে তাদেরকে (ভারত) রেল ট্রানজিট দিয়েছে।

বুধবার (৩ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত জাতীয় সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপে সূচনা বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

চরমোনাই পীর বলেন, বর্তমান সরকারের সৃষ্ট নানাবিধ সংকটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ভারত সফর সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। যে চুক্তিগুলো করা হয়েছে, তাতে কোন আওয়ামী লীগ সমর্থনকারীও বাংলাদেশের স্বার্থ দেখাতে পারছে না। কানেক্টিভিটির নামে যা করা হয়েছে, তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় পরিষ্কার হয়েছে। বাজার করতে যাওয়া ও ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া এর মূল লক্ষ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী যখন সীমানা বিহীন ইউরোপের দৃষ্টান্ত দেখান তখন সীমানা ও স্বাধীনতা নিয়ে আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারি না। 

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ খাতের পরিকল্পনাহীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও খামখেয়ালিপনার সর্বশেষ দেখা গেলো নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার চুক্তি থেকে। ভারতের গ্রিড ব্যবহার, ভারতকে দুই ধরণের মাসুল দিয়ে আনা এই বিদ্যুৎ বিদ্যুৎখাতকে অনিরাপদ ও ভারত নির্ভর করবে। কম দামের যুক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে, অথচ সবার আপত্তি উপেক্ষা করে দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নামে যে যুক্তিতে, যেভাবে ও যে পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয় তাকে মগের মুল্লুকি ছাড়া আর কিছু বলার নাই।

তিনি বলেন, নেপাল-ভুটানের সাথে আমাদের বহুল কাঙ্খিত ট্রানজিট না পাওয়া, তিস্তা, গঙ্গার পানি নিয়ে কোন অগ্রগতি না হওয়া, সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ না হওয়া, সেভেন সিস্টারে আমাদের বাণিজ্য সম্ভবনা নষ্ট করা এবং নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকি, কৌশলগত ভূরাজনীতির নানা জটিলতা সত্ত্বেও যেভাবে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে তাতে বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ ভারত সরকার আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবাংলাকেও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি বিবেচনায় রাখে। বর্তমান সরকার স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবাংলার চেয়েও গুরুত্বহীন করে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ইউপিআই চালুর মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে তুলে দেয়ার পাঁয়তারা করা হয়েছে। পানি বন্টন নিয়ে যে যৌথ কমিটি করা হয়েছে তা নিছক সস্তা ও বহুল ব্যবহৃত একটি আইওয়াশ। তিস্তা প্রকল্প ভারতের হাতে তুলে দেয়ার পাঁয়তারা করা হয়েছে।

চরমোনাই পীর বলেন, এই নির্মম ও কঠিন বাস্তবতাকে সামনে রেখে আমাদের চুপ থাকার সুযোগ নেই। এই সরকার ফেরাউনি স্টাইলে যে নির্যাতন নিপীড়ন করে তার শিকার আমরা কম-বেশি সবাই। তারপরেও প্রিয় স্বদেশ যখন তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে, তখন রুখে দাঁড়ানো আমাদের সকলের সমান দায়িত্ব। আমরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোন জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি, বিজয় আমাদেরই হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আতাউর রহমান গাজীর সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্য সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদিন, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের একাংশের আহ্বায়ক কর্ণেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, গণফোরামে (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর