অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সকল পক্ষের সাথে আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের’ নেতারা।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব এবং অভ্যুত্থানের স্পিরিট রক্ষায় করণীয় প্রসঙ্গে ‘সংস্কার সংলাপ (পর্ব-৩)’ এর আলোচনা সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।
সংলাপে দলের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। এই যুদ্ধ মোকাবেলা করে বিজয় অর্জন করতে গিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ক্রমেই ঐক্যবদ্ধ হতে হতে জাতীয় ঐক্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। বাংলাদেশ এই প্রথম একটি সরকার পেয়েছে, যে সরকার ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং যে সরকারে আন্দোলনকারী নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আছে। এই অবস্থায় সকল পক্ষের উচিত হচ্ছে, এই বিজয় এবং ঐক্যকে সত্যিকারের জাতীয় ঐক্যে রূপান্তর করে অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভুঁইয়া বলেন, শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট মাফিয়া শাসকদের সরানোর জন্য এতো মানুষ জীবন দেয়নি। তারা জীবন দিয়েছে এমন একটি ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে যাতে রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে আর কোন শাসক এমন ফ্যাসিস্ট ও মাফিয়া জুলুমবাজ হয়ে উঠতে না পারে।
১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ৭০ সালের মতো একই সাথে গণপরিষদ সংবিধান তৈরি করবে এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এইরকম সুযোগ আছে কিনা সেই ব্যাপারে ঐক্যমত করতে হবে। এবারের পরিবর্তন যাতে টেকসই হয়, জনগণের অনুমোদন ছাড়া, কয়েকজন বিচারপতি বা সংসদ সদস্য যাতে এবারের পরিবর্তনকে আদালতে বা সংসদে বসে নস্যাৎ করে দিতে না পারে। মানুষের সেই আকাঙ্খাকে স্থায়ী করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামোর সংস্কার করতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা হচ্ছে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা। একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতাকাঠামো সংস্কার করতে হবে। আমরা খুবই আশাবাদী, এতোবড় আত্মদান এতো বড় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সুযোগ এসেছে তা অভাবনীয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নিয়মতান্ত্রিক সংলাপ শুরু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ৭২ এর সেটেলমেন্ট ভেঙে পড়েছে, ২০২৪ সালের জন্য সময়োপযোগী সেটেলমেন্ট তৈরি করতে উদ্যোগ নিন। জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ৭২ সাল যে একব্যক্তিকেন্দিক ক্ষমতা তৈরি করা হয়েছিল যার কোনো জবাবদিহিতা নেই, সেই ক্ষমতাকাঠামো সংস্কার করতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে ওই মাফিয়া সরকার বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার উপর নগ্ন হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এই সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে অধিকার নিশ্চিত করা। আমরা যেনো সংকটকালীন সময় যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম সামনের দিনেও সেভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে সংস্কারের জায়গায় কাজ করতে পারি।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে সংস্কার সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলনের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ফজলুল করিম মারুফ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।