আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ২৩ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটস পার্টি (এলডিপি)।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে সংলাপে অংশ নিয়ে ২৩ দফা প্রস্তাবনা দেন এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল অলি আহমদ।
কর্নেল অলি আহমদ জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রায় ২ মাস সময় পূর্ণ করেছে। এই সরকারের কাছে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা অনেক, তবে এখনো মানুষের মধ্যে এক ধরণের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কাজ করছে। কারণ সংস্কার কর্মকাণ্ডে অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। কোন অবস্থাতেই দেশের মানুষকে নিরাশ করা যাবে না। আমাদের সবার সরকারকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
এলডিপির ২৩ প্রস্তাবনা হলো-
>> অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে মনে হয় যে, তাদের অনেকেই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি দুর্বল। অথচ এই আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার গণআন্দোলনের সময় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বিশেষত গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রকে নিশ্চিহ্ন ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচন পদ্ধতি ধ্বংস করেছে। সর্বস্তরে আত্মীকরণ ও দলীয়করণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম-খুন, জনগণের ওপর নির্যাতন-জুলুম, মেগা প্রকল্পের আড়ালে ব্যাপক দুর্নীতি, বিশাল ঋণ নিয়ে লুটপাট, এবং বিদেশে লাখ কোটি টাকা পাচার এসব নজিরবিহীন অপরাধ সংঘটিত করেছে। সুতরাং এই দেশে তাদের রাজনীতি করার কোন অধিকার নাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তাদের নিবন্ধন বাতিল করার জন্য আরও কত মানুষ শহীদ হওয়ার প্রয়োজন ছিল? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যুক্তিযুক্ত। অন্যথায় শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে। সময় সীমিত, দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং আবেগের পরিবর্তে বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নিন।
>> ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে শেখ মুজিবুর রহমান স্বেচ্ছায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও তার স্বেচ্ছাচারী শাসনের কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বারবার নিগৃহীত হয়েছেন। তিনি কোন ভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক বা জাতির পিতা হতে পারেন না। তার একনায়ক-সুলভ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাজারও মানুষ খুন এবং গুম হয়েছেন, তবুও তার প্রতি একটি ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে। এখনও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের সদস্যদের নাম বিদ্যমান রয়েছে। এই নামগুলো অবিলম্বে পরিবর্তন করা জরুরি এবংব্যক্তিপূজার অপসংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হব্যে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলতে হবে। পাশাপাশি, আমরা আশা করি সরকার বিভিন্ন ধরনের টাকার নোট থেকেও যথাশিগগির শেখ মুজিবের ছবি অপসারণ করবে।
>> স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করতে গিয়ে, ছাত্র জনতার যে আন্দোলন হয়, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তাতে এ যাবৎ সর্বমোট ১৫৮১ জন শহীদ হয়েছে (দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। সরকারের উচিত, জনসম্মুখে তুলে ধরা- কতজন ছাত্র ছাত্রী, কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে শহীদ হয়েছে? কোন রাজনৈতিক দলের কতজন শহীদ হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ কতজন শহীদ হয়েছে? এছাড়াও অনুরূপভাবে আহতদের তালিকাও প্রস্তুত করা প্রয়োজন। এতে করে জনগণ একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাবে। এলডিপির শহীদ হয়েছে ৪ জন, অঙ্গহানি হয়েছে ৪ জন, আহত হয়েছে ১৫ জন।
>> স্বৈরাচারী ও খুনি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়, যে সমস্ত উপদেষ্টা বা কর্মকর্তা গণতন্ত্র হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য দায়ী, তাদেরকে এখনও পর্যন্ত কেন গ্রেফতার করা হয় নাই? উদাহরণ স্বরূপ ড. মশিউর রহমান, কবির বিন আনোয়ার এবং তথাকথিত মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিক, যিনি সেনাবাহিনীর কলঙ্ক হিসেবে পরিচিত।
>> ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে, ইউনিফর্ম পরিহিত কয়েকশ ব্যক্তি দৌড়ে দৌড়ে ভারতের বিশেষ বিমানের মাধ্যমে পালিয়ে যায়। এরা কারা, তা জনগণের জানার অধিকার রয়েছে।
>> দেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৮/১০ জন বড় বড় ক্রিমিনাল রয়েছে। যারা একনায়কত্ব কায়েম করার জন্য শেখ হাসিনাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। এই ক্রিমিনালগুলো দেশের ব্যবসা বাণিজ্য এবং অর্থনীতি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে এখনও পর্যন্ত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামছে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন শহরে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। এছাড়াও বড় বড় প্রকল্পগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছে। এদের মধ্যে অনেকে অনৈতিক কাজেও লিপ্ত ছিল। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য দেশের অর্থনীতি এবং গণতন্ত্রকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে। রাজনীতিবিদরা তাদের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। অন্যদিকে তাদের চুরির টাকাও বিদেশে পাচার করে ব্যাংকগুলোকে ঋণগ্রস্ত করেছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল, রাজনীতিবিদ, এমপি এবং মন্ত্রীদেরকে তাদের কেনা গোলাম হিসেবে ব্যবহার করেছে। যার কারণে এদের কর্মকাণ্ডগুলো প্রকাশ্যে আসছে না। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার কয়েকদিন পূর্বেও এই ক্রিমিনাল ব্যবসায়ীরা তাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। এরা দেশদ্রোহী, জনগণের শত্রু এবং মানুষের রক্ত চুষে খেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চৌকস অফিসারদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তদন্তের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। বিদেশে পাড়ি দেওয়ার পথ বন্ধ করতে হবে এবং যারা বিদেশে অবস্থান করছে তাদেরকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আগামীতেও দুর্নীতি বন্ধ হবে না।
>> বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অহেতুক সময় ক্ষেপণ করছে। তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয়, তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখার পরিকল্পনা করছে। কারণ প্রায় দুই মাস সময় অতিক্রান্ত করার পরও এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের আদালতগুলোতে স্বৈরাচারী সরকারের নিয়োগ দেওয়া পিপিরা কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও আওয়ামীপন্থী বিচারকগণ নিজ নিজ অবস্থানে বহাল তবিয়তে আছে। ফলে সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
>> শতকরা প্রায় ৯৫ শতাংশ সরকারি, আধা-সরকারিএবং স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার লোটাবাহিনী এখনও পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে রেখেছে। ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। সরকারি কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত তাদেরকে চিহ্নিত করে, চাকরি থেকে বরখাস্ত করা। বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদায়ন করা বন্ধ করতে হবে। দুঃখের সাথে বলতে হয়, তাদেরকে বরখাস্ত করা দূরে থাক, বরং কিছু কিছু নতুন জায়গায় বিতর্কিত ব্যক্তিদেরকে নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যেমন- শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি ইত্যাদি।
>> বিগত ১৫ বছর বিভিন্ন সময় স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং বিগত সরকারের অন্যান্য সংগঠনের সদস্যবৃন্দ প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করেছে। অবৈধ অস্ত্রধারীদের সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। অতঃপর সময় ক্ষেপণ না করে তা উদ্ধারের পদক্ষেপ নিতে হবে।
>> ১৯৯৬ সালের পর হতে যে সব ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আমরা এলডিপির পক্ষ থেকে তাদের বাতিল করার জন্য দাবি জানিয়েছিলাম, যা খুবই যুক্তিযুক্ত। অদ্যবধি তাদের কেন বাতিল করা হয় নাই?
>> ২০১৪ সালের পর হতে যে সব ব্যক্তিরা ইউনিয়ন ও উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সিটি করপোরেশনের মেয়র, এমপি এবং মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও তাদের অবৈধ সম্পদ ও দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ণ মিলিয়ে দেখা যুক্তিযুক্ত।
>> দেশের বিভিন্ন পৌরসভাগুলোতে এখনও স্বৈরাচারী সরকারের নিয়োগ দেওয়া ওএমএস ডিলারগুলো বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জন্য স্বৈরাচারী সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার এত দুর্বল কেন? কি কারণে তাদের জায়গায় নতুন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না? সন্দেহ হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেকেই শেখ হাসিনার পক্ষ অবলম্বন করে কাজ করছে।
>> পাহাড়ি এলাকার কিছু কিছু সদস্যরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সম্মুখে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করতে দেখা যায়। যা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্ত পরিবেশের বিষয়টি হালকাভাবে দেখলে সমস্যা বৃদ্ধি পাবে। সমস্যা সৃষ্টিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে আমরা কোন গোষ্ঠীর নিকট ইজারা দেই নাই। প্রয়োজনে আর্মির সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সীমান্ত এলাকায় অবৈধ পারাপার বন্ধ করতে হবে।
>> স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইতে বিদেশিদের জন্য একটি শিল্পাঞ্চল বা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় আনলে ঐ অঞ্চলটি খুবই স্পর্শকাতর। কোন একক দেশকে এই অঞ্চলে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া থাকলে, আশাকরি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, বাংলাদেশের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে, এই শিল্পাঞ্চল বা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করে দিবেন।
>> পশ্চিমবঙ্গ এবং দিল্লির বিভিন্ন সংগঠন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য অব্যাহত রেখেছে। ভারত কিভাবে আশা করে, এ ধরণের উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার পরও বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন হবে? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত এই বিষয়গুলি ভারত সরকারের নিকট উত্থাপন করা এবং প্রতিবাদ করা। এছাড়াও ভারত এদেশের বিগত সরকারের বড় বড় দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়দাতার ভূমিকা পালন করছে। আগামীতে আমরাও যদি, তাদের এ ধরণের নাগরিকদের আশ্রয় দেই, তাহলে কি ভাল হবে? তা কি সুপ্রতিবেশী সুলভ আচরণ হবে?
>> আইন শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, আমাদের সকলের দায়িত্ব। বিভিন্ন জায়গায় কিছু কিছু লোক উপজেলাসহ বিভিন্ন স্তরে, অফিসারদেরকে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে, টাকা পয়সা রোজগারে ব্যস্ত। এই ধরনের ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করে, অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করতে হবে।
>> বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কিছু কিছু ছাত্র, ছাত্রলীগের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, অনেক শিক্ষকের পদত্যাগসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে। শিক্ষার মান বজায় রাখা এবং পাঠদান নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
>> বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জুন ২০২৪ এ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশের শতকরা ৯১.৫৮ শতাংশ মানুষ মুসলমান। শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।
>> প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে ভর্তি ফি অনৈতিকভাবে ১৫/২০ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরণের অনৈতিক ব্যবসা বন্ধ করতে হবে এবং ভর্তি ফি সাধারণ মানুষের সক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এই ব্যাপারে সরকারকে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
>> আমাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রাইমারি স্কুল সমূহের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের টাইমস্কেলের বৈষম্য রয়েছে। যার ফলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মান উন্ননের জন্য এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত।
>> যে সমস্ত সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী অবসর গ্রহণ করার পর তাদের পেনশনের শতভাগ বিক্রি করে নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদেরকে বিগত সরকার পুনরায় শতভাগ পেনশন নতুনভাবে প্রদান করে। অথচ যে সব সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী পেনশনের ৫০ ভাগ বিক্রি করেছে, তাদেরকে পুনরায় শতভাগ পেনশন প্রদান করা হয় নাই। আশাকরি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিষয়টি সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করবে।
>> স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমদ এবং তৎকালীন মেজর জেনারেল আকবরের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হন। ষড়যন্ত্র সূক্ষ্মভাবে করা হয়েছিল বিধায়, অনেকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে নাই। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছাড়া স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পাতানো খেলায় অন্যকোন দল অংশগ্রহণ করে নাই। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা এবং বিদেশি একটি শক্তি ড. কামাল হোসেনের মাধ্যমে নতুন আরেকটি ষড়যন্ত্র করে, এতে বিএনপিসহ প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে সক্ষম হন। ওই সময় যে সব নেতারা ডক্টর কামাল হোসেন এবং ডাক্তার বি. চৌধুরীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল, তাদের প্রত্যেককে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য নগদ ২ কোটি টাকা করে দেওয়া হয় এবং আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে সরকার গঠন করে। মূলত ওই নির্বাচনে আওয়ামী সমর্থনকারী অফিসাররা সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে রাতের অন্ধকারে ভোটের বাক্স ভর্তি করে।
২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দালাল জাতীয় পাটি এবং টাকার বিনিময়ে কয়েকজন তথাকথিত কলঙ্কিত ব্যক্তি ছাড়া অন্যকোন দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নাই। সুতরাং আমরা মনে করি, গণতন্ত্র এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে ২০১৮ সালে রাতের বেলা ব্যালট পেপার ছিঁড়ার কাজে যে সব ডিসি, এসপি, এএসপি, ইউএনও, বিভিন্ন থানার ওসি এবং তদন্ত কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে চাকরিচ্যুত করা একান্ত কর্তব্য। এছাড়াও যে সব দালালেরা ২০২৪ সালে টাকা এবং ট্যাক্স ফ্রি গাড়ির লোভে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, তাদেরকে গ্রেফতার করা উচিত। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যুক্তিসংগত।
>> বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সুপারিশ দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কমিশন গঠন করেছেন। ওই কমিশনগুলোর একজন প্রধান বা পাঁচজনের পক্ষে সমগ্র জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব নয়। সুতরাং এই ব্যাপারে আমাদের প্রস্তাব নিম্নরূপ-
(ক) কমিশন প্রধান এবং অপরাপর সদস্যবৃন্দ সম্ভাব্য বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে প্রাথমিক প্রস্তাব প্রস্তুত করবেন। (খ) অতঃপর উক্ত প্রাথমিক প্রস্তাবগুলো আলোচনার জন্য সমগ্র দেশ থেকে ওই বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার জন্য দুই বা তিন দিনব্যাপী ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করবেন। সকলের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাবনাগুলো লিপিবদ্ধ করবেন। (গ) তৃতীয় পর্যায়ে উপরোক্ত প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রস্তাবনা তৈরি করে সরকারের নিকট উপস্থাপন করবেন।