ফরিদপুরের নগরকান্দায় হামলা চালিয়ে সরকারি জায়গায় থাকা বিধবার বাড়ি দখলের চেষ্টার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার মাত্র একদিন পরই সেই বিধবা নারী আসমা বেগমের বাড়িতে ছুটে এসেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের রসুলপুর বাজার এলাকার বিধবা আসমার বাড়িতে গিয়ে তার খোঁজখবর নেন তিনি। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আসমা বেগমের হাতে আর্থিক সহায়তা চেক তুলে দেন রিজভী।
চেক প্রদান শেষে রুহুল কবির রিজভী বলেন, যারা সমাজে অপরাধ করবে, তারা যে দলেরই হোক তাদের উপযুক্ত বিচার করা হবে। তারেক রহমান আমাদের সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। আসমার বাড়ি দখলের সংবাদ রোববার রাতে পেয়েই তারেক রহমান আমাদের এখানে আসার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সকাল বেলায়ই চলে এসেছি। আসমার বাড়ি দখলের চেষ্টাকারী যদি বিএনপির কেউ হয়, তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আসমার বাড়ি পরিদর্শনের সময় রুহুল কবির রিজভীর সাথে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা ও সদস্য সচিব একে এম কিবরিয়া স্বপনসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, অভাবের তাড়নায় বছর ২৫ বছর আগে মুন্সীগঞ্জ থেকে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের রসুলপুর বাজার এলাকায় এসে প্রথমে স্থানীয় প্রভাবশালী কথিত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কবিরের চাচাতো ভাইকে বিয়ে করেন আসমা। পরে আসমার সেই স্বামী মারা গেলে স্থানীয় মফিজ মিয়া নামে আরেক ব্যক্তিকে বিয়ে করে রসুলপুর বাজার এলাকায় কুমার নদের পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গার উপর দোচালা একটি টিনের ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। স্বামী মফিজ অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু গত ৬ বছর আগে আসমার স্বামী মফিজও মারা যান। এরপর থেকে বিধবা আসমা অসহায় অবস্থায় ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছে।
আসমা বেগম বলেন, আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করে আসছি। এই ঘরটা ছাড়া আমার কোনো জায়গা-জমি নেই। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় প্রভাবশালী সালাহউদ্দিন কবির জাল স্টাম্প দেখিয়ে আমাকে জায়গা খালি করে দিতে বলেন। এতে আমি রাজি না হওয়ায় সালাহউদ্দিন ও তার লোকজন সম্প্রতি আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
এখন বাড়ি না ছাড়লে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে আপনারা রোহিঙ্গাদের মতো একটু থাকার জায়গা করে দেন। আমি আর পারছি না। সালাহউদ্দিন প্রতি শুক্রবার আমার বাড়িতে এসে হুমকি দেয়। তার যন্ত্রণায় আমার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমি নারী মানুষ, কোথায় যাবো। আমাকে একটু থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আমার দাবি জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ঘটনার পর গত রোববার (৩ নভেম্বর) মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ে কথিত বিএনপির নেতা হানা, শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসে। এরপরই সোমবার রুহুল কবির রিজভী আসমার বাড়িতে ছুড়ে আসেন।