নতুন নির্দেশনায় উজ্জীবিত নেতা-কর্মীরা

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 11:49:44

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তিন বছরের মেয়াদ পূর্তিতে চলতি বছরের অক্টোবরেই ২১তম জাতীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ইতোমধ্যেই সম্মেলনকে কেন্দ্রে করে বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় সভাপতির নির্দেশনা আসায় চাঙা হয়ে উঠেছে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

তারা বলছেন, ‘নিয়মিত সম্মেলন আয়োজনের মধ্যদিয়ে একমাত্র আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মী ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে থাকে।’

চলতি বছরের শুরুতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পরদিন ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দলীয় সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যান। সেখানেই সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তখন থেকেই আওয়ামী লীগের আগাম সম্মেলন আয়োজনের একটা গুঞ্জন উঠেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান যে, অক্টোবরেই হবে আওয়ামী লীগের সম্মেলন। কাদেরের বক্তব্যের সম্মেলন প্রত্যাশীদের মধ্যে কিছুটা ভাটা পড়লেও ফের নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে শুক্রবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে।

সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে সম্মেলনের প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এসময় যথাসময়ে সম্মেলন আয়োজনে নেতা-কর্মীদের তাগিদ দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করারও ইঙ্গিত দেন তিনি।

দলীয় সভাপতির ইচ্ছে, গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে সম্মেলন আয়োজনের জন্য আটটি বিভাগীয় টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। দলের উপদেষ্টামণ্ডলী, সভাপতিমণ্ডলী এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত এই টিমসমূহ আটটি সাংগঠনিক বিভাগের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ ও গতিশীল করবে।

মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে ইতোমধ্যে আটটি টিম গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল-উল-আলম হানিফ ইতোমধ্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে টিম গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশে ফিরে আসার পর এই টিমগুলো প্রকাশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে যেসব জেলা, উপজেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কিংবা কমিটি নেই সেগুলো চিহ্নিত করা হবে। এরপর সম্মেলনের মধ্যদিয়ে সেখানে কমিটিগুলো দেওয়া হবে। আটটি টিমের মাধ্যমে এগুলো মনিটরিং ও সমন্বয় করা হবে।

সম্মেলনকে কেন্দ্রে করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। বিশেষ করে সম্মেলনে দলীয় পদপ্রত্যাশী নেতারা নিয়মিত পার্টি অফিসে সময় দিচ্ছেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

সম্মেলন নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ‘তৃণমূল আওয়ামী লীগকে আরও বেশি সংগঠিত এবং ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা, সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করতে নিয়মিত সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেদিক থেকেই দলীয় সভাপতি চান সম্মেলনের মধ্যদিয়ে সংগঠন চাঙা থাকুক।

আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কাউন্সিল যথাসময়েই হবে। আর কাউন্সিলের প্রস্তুতি যেগুলো সেগুলো এই উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার পরেই সম্মেলনের প্রস্তুতিগুলো আছে সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ শুরু করব।

আসন্ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে বেশ কিছু চমকের আভাস পাওয়া গেছে। শীর্ষ পদগুলোতে যেমন নতুন নেতৃত্বের সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনি বেশকিছু পদে রদবদলেও চমক দেখা যেতে পারে।

ইতোমধ্যেই দলীয় সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দুই জন সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম নেতা-কর্মীদের আলোচনায় উঠে এসেছে। তাদেরকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন অনুসারীরা।

সম্মেলনে কোনো চমক থাকছে কী না জানতে চাইলে আবদুর রহমান আরও বলেন, ‘চমক কী থাকবে সেটা যিনি চমক দেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন। কারণ চমকের ব্যাপারটা তো আমরা আগাম বলতে পারব না।’

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হয় তিন বছর পরপর। ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা টানা অষ্টমবারের মতো পুনঃনির্বাচিত হন, তবে সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ এসেছিলেন ওবায়দুল কাদের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর