পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রভাগের ঘূর্ণনগতি ক্রমশ ধীর হয়ে আসছে। কয়েক দশকের পর্যবেক্ষণের পর এ তথ্য জানিয়েছেন গবেষকেরা।
বিজ্ঞানবিষয়ক অনলাইন বিজ্ঞান সাময়িকী স্পেস.কম ২১ জুনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের কেন্দ্রের ঘূর্ণনগতি এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ কমে গেছে। বিভিন্ন সময়ের ভূমিকম্প এবং পারমাণবিক পরীক্ষার কারণে এ ঘূর্ণনগতি কমতে শুরু করেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগ যে গতিতে ঘুরছে, পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের কেন্দ্র সে তুলনায় আগের চেয়ে এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ কম গতিতে ঘুরতে শুরু করেছে। এতে করে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের কম হয়েছে। গত এক দশক ধরে ভূকম্পন উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
তারা ভূকম্পনের তরঙ্গের মাত্রা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছেন বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার (ইউএসসি) গবেষকেরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্প এবং পারমাণবিক পরীক্ষার কম্পন পুরো গ্রহে ছড়িয়ে পড়ে।
তারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়া এই কম্পনের মাত্রা পরিমাপ করে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের বিচ্যুতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন।
গবেষকেরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ২০১০ সাল থেকে এই বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে জানা গেছে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের গতি আগের তুলনায় কমে গেছে।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার (ইউএসসি) আর্থ সায়েন্সের অধ্যাপক জন ভিডেলি বলেছেন, বেশ কয়েক দশকের পর এই প্রথম জানা গেছে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের ঘূর্ণনগতি কমে গেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন মডেল উপস্থাপনার পর এ সিদ্ধান্তে আসা গেছে।
প্রসঙ্গত, পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ ভীষণরকম উত্তপ্ত এবং খুব ঘন কঠিন বস্তুর তৈরি। এর মধ্যে লোহা ও নিকেল রয়েছে।
এ স্তর ভূপৃষ্ঠ বা আমাদের পায়ের তলা থেকে ৩ হাজার ২শ মাইল (৫ হাজার একশ ৫০ কিলোমিটার) গভীরে। এর তাপমাত্রা ৯ হাজার ৮শ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এর বাইরের স্তর লোহা আর নিকেলের সঙ্গে কঠিন পাথরের আবরণে আবৃত।
নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের কেন্দ্রের ঘূর্ণনগতি ধীর হওয়ার কারণ, বাইরের স্তরের সঙ্গে তরল লোহার মিশ্রণের ফলে পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। এটি মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে আকর্ষণ করে মিশে যায়।
গবেষণা পরিচালনায় মোট ১শ ২১টি ধারাবাহিক ভূমিকম্পের তথ্য ব্যবহার করা হয়। এর ক্ষেত্র ছিল সাউথ আটলান্টিক ও সাউথ স্যান্ডউইচ দ্বীপ আর ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৩ সালের কম্পন রেকর্ড করা উপাত্ত ব্যবহার করা হয়।