সেপারেশন চলছে, ডিভোর্স ডেট ৩০ জুন ২০২১!

ফুটবল, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পোর্টস এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 03:30:17

সমস্যার আপাতত একটা সমাধান হয়েছে।

মেসি থাকছেন বার্সায়। চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের এই ইচ্ছে পূরণের জন্য তাকে আদালত পর্যন্ত যেতে হতো। ভালোবাসার ক্লাবকে আদালতের আঙ্গিনায় টানতে চাননি তিনি। ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর ট্রান্সফার ক্লজের বিষয়টা অবশ্যই বিতর্কের। আদালতে বিষয়টি গেলে হয়তো মেসি জিততেও পারতেন। কিন্তু ২০ বছর ধরে যে ক্লাবের সঙ্গে তার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা আদালতের বারান্দায় আইনজীবিরা কাঁটাছেড়া করছেন- এমন দৃশ্য মেসি দেখতে চাননি। আর তাই এই মৌসুম অর্থাৎ আরও একটা বছর আপাতত এফসি বার্সেলোনাতে থাকছেন তিনি।

বার্সেলোনার জার্সি গায়ে মাঠে মেসি ক্যারিয়ার জুড়ে অনেক ফুটবল ম্যাচ জিতেছেন। ম্যাচ হেরেছেনও। তবে মাঠের বাইরে ক্লাবের পরাজয় দেখতে চাননি তিনি। তাই এক প্রকার নিজে হেরেও দলকে তো জেতালেন!

বার্সায় শুরু এবং বার্সায় শেষ হবে আমার ফুটবল ক্যারিয়ার। একসময়ে এমন জনপ্রিয় ঘোষণা দেওয়া মেসিও কিন্তু বার্সা ছাড়তে চেয়েছেন। বার্সায় খেলে তারকা হয়েছেন। আবার নিজের প্রয়োজনে ক্লাব বদল করেছেন- এমন নজির একটা নয়, অনেক আছে। শুধু বার্সা কেন, এটা তো জাগতিক নিয়মই বটে! তবে মেসি বার্সা ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ায় যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে তাতে প্রশ্নটা আবার সামনে এসেছে-আসলে গুরুত্বের তালিকায় কে শীর্ষে; একা মেসি নাকি পুরো এফসি বার্সেলোনা?

বার্সেলোনার শ্লোগান হলো- ‘মোর দ্যান অ্যা ক্লাব’। সংক্ষিপ্ত অর্থে এর ব্যাখ্যাটা এমন- বার্সা নেহাৎ ৯০ মিনিটের ম্যাচ খেলা বা জেতার কোনো ক্লাব নয়। এটা ১ লাখ ৪৪ হাজার সদস্যের বিশাল সুখী এক পরিবার। বার্সা শুধু জিতেই না। শেখায়ও। তৈরি করে। গড়ে। শুধু নেহাৎ খেলা বা জয়ই নয়- সঙ্গে শেখায় মূল্যবোধ, মানবিকতা, লক্ষ্যার্জন, একজোট হয়ে থাকা এবং পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ। কাতালান সংস্কৃতির মৌলিকত্বের পতাকা উড়াচ্ছে এই ক্লাব। বার্সেলোনা শহরের সবচেয়ে চেনা এবং বড় পরিচয়ের অংশ হয়ে আছে এই ফুটবল ক্লাবটি।

সেই বার্সেলোনায় খেলা অনেক তারকার ভিড়ে লিওনেল মেসিই একমাত্র ফুটবলার যার নাম উচ্চারণের সঙ্গে বার্সা গর্বিত ভঙ্গিতে বলতেই পারে- ‘মেসি, মোর দ্যান অ্যা ফুটবলার!’

১২০ বছর পুরনো বার্সেলোনার ইতিহাসের সেরা অংশটা হলো ২০০৮ থেকে ২০১৬। সাফল্য, দাপট, কৃতিত্ব এবং প্রতিপক্ষের মর্যাদা অর্জন- এই উপাত্তের যোগফলে এটাই বার্সার সেরা সময়। আর সেই সেরা সময়ের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি।

ক্লাব ইতিহাসের সর্বকালের সেরা সেই খেলোয়াড়ই যখন অন্য লিগে চ্যালেঞ্জের জন্য দলবদল করতে চাইলেন তখন তাকেই ‘বিশ্বাসঘাতক’ অপবাদ দিয়ে চাবুকের আঘাত!

মেসিকে যেতে না দেওয়ার এই লড়াই জিতে হয়তো এখন বার্সার প্রেসিডেন্ট মারিয়া বার্তোমেউ এবং বর্তমান পরিচালকরা ‘বড় ম্যাচ জেতার’ সুখ অনুভব করছেন। কিন্তু ২৫ আগস্টের রাত থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ‘ম্যাচ’ যন্ত্রণার অসুখ, অবিশ্বাস এবং সন্দেহের কাঁটায় মেসির হৃৎপিণ্ড এফোঁড়-ওফোঁড় করেছে। সেই রক্তাক্ত যন্ত্রণা নিয়ে একটা মৌসুম বার্সার সঙ্গে মেসিকে ‘লিভ টুগেদার’ করতে হবে।

মেসি হয়তো এই পুরো মৌসুম জুড়ে সেরাটাই খেলবেন। আরও অনেক গোল পাবেন। দলকে জেতাবেন। সেপারেশনের এই সময়টায় ওতেই শান্তি-সান্ত্বনা না খোঁজার চেষ্টা করবেন।

- সেপারেশন?

ডিভোর্স চূড়ান্ত হওয়ার আগের সময়কে তো সেই নামেই ডাকা হয়! স্প্যানিশ ফুটবল সূচি জানাচ্ছে সামনের বছর ৩০ জুনে শেষ হবে লা লিগার মৌসুম। মেসির সঙ্গে বার্সার আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক শেষ সেদিনই।

মেসি, বার্সা ও বার্তোমেউ- এই ত্রয়ীর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জিতল?

বার্সার প্রতি মেসির ভালোবাসা জিতল। নাকি নিজের জেদ এবং বেনিয়া কূটকৌশলে মেসিকে পর্যদস্ত করার মধ্যে ব্যক্তিগত সুখের হুক্কায় ধোঁয়া ছাড়ছেন বার্তোমেউ?

- ‘তুমি অনেক যত্ন করে আমায় কষ্ট দিতে চেয়েছো, দিতে পারোনি। যদি বলি আমি কি হেরেছি, তুমি কি একটুও হারোনি...?’

মান্না দে’র বিখ্যাত এই গানটা স্প্যানিশ ভাষায় মেসি এখন বার্তোমেউকে শোনাতেই পারেন!

স্পেনের ফুটবল পত্রিকা মার্কাও তাদের সম্পাদকীয়তে সেই সত্যিটাই জানাচ্ছে, বার্সা-মেসি-বার্তোমেউ’র এই লড়াইয়ে কেউ জেতেনি। সত্যিকার অর্থে তিনপক্ষই হেরেছে।

বার্সেলোনা ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে মেসি হেরেছেন। বেনিয়া কূটকৌশলের জোচ্চুরি আর মিথ্যাবাদী আচরণ দেখিয়ে হেরেছেন বার্তোমেউ। আর হ্যাঁ, বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলের হারের চেয়ে বড় পরাজয় হয়েছে বার্সেলোনার মেসির দলবদলের জটিলতায়। প্রতিষ্ঠান হিসেবেও বার্সার এটা অনেক বড় একটা পরাজয়।

ইয়েস, মোর দ্যান এ ডিফিট...!

আরও পড়ুন-

একটি ‘ফুটবলীয়’ ডিভোর্স!

পাল্টে যাচ্ছে পাশা, মেসি কি থেকে যাচ্ছেন বার্সায়?

মেসি জানালেন-বার্সাই ভালবাসা, এখানেই থাকছি

এ সম্পর্কিত আরও খবর