প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে জেমকন খুলনা গড়েছে ৭ উইকেটে ২১০ রানের বিশাল স্কোর। দলের টপস্কোরার ওপেনার জহুরুল ইসলাম। ৫৫ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। মাঝে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসানের ঝড়ো ইনিংসে জেমকন খুলনা দুশো’র বেশি রান তোলে। তবে সব ছাপিয়ে খুলনার ইনিংসে আলোচনার শীর্ষে ছিল শেষ ওভারটি।
মুস্তাফিজুর রহমানের করা সেই ওভারে কি ঘটেনি? রান আউট হয়েছে। বোল্ড হয়েছেন একজন ব্যাটসম্যান। নো বল হয়েছে। সেই নো বলে আবার রান আউট হয়েছে। ওয়াইড বল হয়েছে। বাই রানও এসেছে। দুটি বিমার দেয়ায় বোলিং করা থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন বোলার। একটি ছক্কাও হয়েছে সেই ওভারে। আর হ্যাঁ, এতকিছুর ওভারে ডটবলও হয়েছে!
ইনিংসের ঘটনাবহুল শেষ ওভারের পুরো ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রথম বল: মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম বলেই জোরে শট খেলেন আরিফুল হক। নিজের ফলোথ্রুতে মুস্তাফিজ কোন মতো সেই বল ঠেকিয়ে দেন। কিন্তু ততক্ষনে সাকিব আল হাসান রান নিয়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন। রান হবে না জেনেও আরিফুল হক ঠিকই দৌড় দিলেন। কিন্তু তিনি বোলিং প্রান্তে এসে পৌঁছানোর আগেই মুস্তাফিজ স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দিলেন। মূলত সাকিবকে রক্ষা করতেই আরিফুল নিজের উইকেট উৎসর্গ করলেন। আত্মত্যাগ আর কি!
সেই বলে কোন রান হলো না।
দ্বিতীয় বল: ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান প্রস্তুত। মুস্তাফিজ বল করলেন কিন্তু ফুলটসটা কোমর সমান উচ্চতায় গেল। আম্পায়ার তানভীর নো বলের ইঙ্গিত দিলেন। ফ্রিহিট। সাকিবের ব্যাটে লেগে বলটা পয়েন্টে গেল। দৌড়ে সাকিব একরান নিলেন। ফ্রিহিট মোকাবেলায় ব্যাটসম্যান শুভাগত হোম। কিন্তু মুস্তাফিজের ফ্রিহিটের বলে যে শুভাগত ব্যাটই লাগাতে পারলেন না। ফ্রিহিট হলো ডটবলের!
তৃতীয় বল: মুস্তাফিজের বলটা ফুলটস বলটা অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরে পড়লো। আম্পায়ার ওয়াইড বলের ঈশারা দিলেন। শুভাগত দৌড়ে বাই রান নিলেন। প্রান্ত বদলে স্ট্রাইকে গেলেন সাকিব। ওয়াইডের অতিরিক্ত সেই বলে সাকিব স্কুপ শটে বাউন্ডারি হাঁকালেন।
চতুর্থ বল: অফস্ট্যাম্পের ওপরে মুস্তাফিজের লেন্থ বল। সাকিব জোরে হাঁকালেন। কিন্তু ব্যাটে-বলে হলো না। বলের লাইন মিস করলেন পুরোদস্তুর, বোল্ড! ১৫ বলে ২৮ রান করে সাকিব ফিরলেন। উইকেট পেলেও মুস্তাফিজ কোন উল্লাস করলেন না।
পঞ্চম বল: নতুন ব্যাটসম্যান শামীম হাসান প্রস্তুত। মুস্তাফিজের করা সেই ডেলিভারিও ফুলটস এবং কোমরের ওপর দিয়ে গেল। পরিস্কার বিমার। বলটা অবশ্য ব্যাটে লাগালেন শামীম। প্রথম রানটা নেওয়ার পর দৌড়ালেন দ্বিতীয় রান নেয়ার জন্য। কিন্তু সেই রান পুরো করতে পারলেন না। ক্রিজে পৌঁছাতে ডাইভ দিলেন। তবে তার আগেই বল ধরে লিটন দাস তাকে রান আউট করে দেন। আম্পায়ার তখন নো বলের ঈশারা দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে মুস্তাফিজকে জানিয়ে দেন দুটো বিমার ডেলিভারি দেয়ায় তিনি আর বোলিং করতে পারবেন না। আদেশ মেনে নিয়ে মুস্তাফিজ মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান।
মুস্তাফিজের ওভার পুরো করার দায়িত্ব নেন সৌম্য সরকার। যার প্রথমটাই ছিল ফ্রিহিট। নতুন ব্যাটসম্যান মাশরাফি বিন মর্তুজা সেই ফ্রিহিটে ছক্কা হাঁকান।
ষষ্ঠ বল: সৌম্যর করা ওভারের শেষ বলে মাশরাফি ব্যাট লাগাতেই পারলেন না। স্লোয়ার ডেলিভারি উইকেটকিপার লিটন দাস গ্লাভসে নিলেন। ডট বল।
সবমিলিয়ে মুস্তাফিজ+ সৌম্যের সেই ওভার থেকে রান এলো ১৬। উইকেট পড়লো তিনটি!