নেদারল্যান্ডস ও আর্জেন্টিনার মধ্যকার ম্যাচে উত্তেজনা এতখানি ছিল শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা মল্লযুদ্ধে পরিণত হওয়াটাই বাকি ছিল কেবল। ম্যাচে ফাউল করা, হলুদ কার্ড, লাল কার্ড সব ছিল। দুই দলের খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা ভুলে নেমেছেন যুদ্ধে। মাঠের লড়াই শেষে লড়াই হয়েছে মাঠের বাইরেও। কোচকেও পর্যন্ত অপমান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার লুসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচ নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ২-২ গোলে সমতায় শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে আর্জেন্টিনা ম্যাচ জিতে জায়গা করে নিয়েছে সেমিফাইনালে।
সেমিফাইনালে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া।
ম্যাচে ১৮টি হলুদ কার্ড দেখাতে হয়েছে রেফারি মাতেও লাহোজকে। লাল কার্ড দেখিয়েছেন তিনি নেদারল্যান্ডসের ডেনজেল ডামফ্রিজকে। হলুদ কার্ড দেখেছেন লিওনেল মেসিও। ম্যাচে দুই দল মিলে ফাউল করেছে ৪৮টি। এক ম্যাচে ফাউল সংখ্যা ৪৮, ভাবা যায়!
২০০৬ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগালের মধ্যকার এক ম্যাচে ১৬টি হলুদ কার্ড ও ৪টি লাল কার্ড দেখেছিল বিশ্ব। এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডের ম্যাচ হলুদ কার্ডের সেই রেকর্ড বুঝি ভেঙে দেওয়ার ম্যাচ! ম্যাচ পর্যন্ত এটা সীমিত থাকলে এত কথা হতো না, কিন্তু ম্যাচ–পরবর্তী হিংসা ও ঘৃণার উদ্গিরণে এই ম্যাচ ছাড়িয়ে গেছে সবকিছু। বিস্ময়করভাবে এখানে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন লিওনেল মেসি। যিনি কি-না শান্ত-সৌম্য চেহারা ও আচরণের ধারাবাহিকতা এতদিন ধরে রেখেছিলেন!
নেদারল্যান্ডস ম্যাচ হেরেছে পেনাল্টি শুটআউটে। শোকেস্তব্ধ কেউ কেউ মাঠে শুয়ে পড়েছিলেন, কেউ বা দু'হাতে মুখ ঢেকে বসেছিলেন দুঃখে, বেদনার্ত দৃষ্টিতে কেউবা শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। স্বভাবিকভাবেই আর্জেন্টিনা দলের একাংশ উদযাপনে, আরেক অংশ কিনা ডাচদের মুখ ভেঙাচ্ছিল, বিদ্রূপ করছিল; এমন দৃশ্য দেখা যায় না সচরাচর!
শুনতে অবাক লাগবে যে কথায় সেটা হচ্ছে- মেসি এক ডাচ ফুটবলারকে কটূক্তি করেন। ‘এদিকে তাকিয়ে আছিস কেন, গাধা’ বলে গালি দেন এই আর্জেন্টাইন মহাতারকা। টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দেওয়া মেসির এই গালি পুরো বিশ্বে প্রচারিত হয়ে গেছে। জানা গেছে, ওই ডাচ খেলোয়াড়ের নাম ভাউট ভেগহোর্স্ট। দুই গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন এই ফুটবলারই।
শেষ কি এখানে? না, আরও আছে! ম্যাচের আগে নেদারল্যান্ডসের কোচ লুই ফন গাল একটা খোঁচা দিয়েছিলেন মেসিকে। যার মূল কথা ছিল, প্রতিপক্ষ যখন আক্রমণে যায়, মেসি তখন দাঁড়িয়ে থাকে। ফন গালের এই মন্তব্যে ম্যাচের আগে উত্তাপ ছড়িয়েছিল। ম্যাচ শেষেও দেখা গেল এর প্রকাশ। খেলার সময়ে ডাচ কোচ দলকে নির্দেশনা দিতে দেখা গিয়েছিল। এটা আবার পছন্দ হয়নি আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ো মার্তিনেজের। প্রতিপক্ষ দলের কোচকে মুখ বন্ধ রাখার দেন তিনি। ওই ডাচ নাকি বেশি কথা বলেন, এমন অভিযোগ আবার মার্তিনেজের।
মার্তিনেজের প্রসঙ্গ ছাড়াও ডাচ কোচ ফন গালের প্রতি বিরূপ মন্তব্য জুড়েছেন লিওনেল মেসি। মাঠে প্রকাশ্যে ফন গালকে জবাব দিয়ে দেবেন মেসি, এটা ভাবতে পারেননি কেউ, ফন গালও। নেদারল্যান্ডস সুন্দর খেলেনি, ফন গাল যে এত সুন্দর ফুটবল, ভালো ফুটবল বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন; তিনি লম্বা লম্বা ফরোয়ার্ডদের নামিয়ে বক্সের মধ্যে শুধু ক্রস ফেলতে পারেন!
লম্বা লম্বা ফুটবলারদের লম্বা লম্বা পাস নিয়ে মেসি যতই বিরূপ মন্তব্য করুন না কেন ম্যাচ শেষের দিকে ৬ ফুট ২ ইঞ্চি আর ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি দুই ফরোয়ার্ডকে নামিয়েই নেদারল্যান্ডসকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন লুইন ফন গাল। মেসি কি এখানেই বিরক্ত? প্রতিপক্ষের কৌশলে কেউ বিরক্ত হতে পারেন, কিন্তু প্রকাশ্যে কি এভাবে বলা যায়? অন্তত মেসির মতো মহাতারকার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করা যায়?