‘মোহামেডানকে ধ্বংস করতে লোকমানকে পাঠিয়েছেন বিসিবি সভাপতি’

বিবিধ, খেলা

আপন তারিক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 04:40:06

অবশেষে নড়েচড়ে বসেছেন মোহামেডান ক্লাবের সাবেক খেলোয়াড় ও স্থায়ী সদস্যরা। ক্লাব যখন মাঠের ফুটবলের তলানিতে, যখন ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে ধ্বংসের পথে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি, তখনই একজোট হয়ে সরব হলেন তারা। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ জানাতেই জড়ো হলেন বাদল রায়ের নেতৃত্বে ক্লাবটির সাবেক খেলোয়াড়, স্থায়ী সদস্য, কর্মকর্তা আর সমর্থকরা।

যেখানে আলোচনার কেন্দ্রে থাকলেন সদ্য গ্রেফতার হওয়া ক্লাবটির ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। যাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে। র‌্যাব জানিয়েছে, তাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে লোকমান হোসেন স্বীকার করেছেন-মোহামেডান ক্লাবে ক্যাসিনো বসানোর ভাড়া হিসেবে তিনি মাসে ২১ লাখ টাকা পেতেন। এই অর্থের সিংহভাগই লোকমান তার নিজের বিদেশী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাচার করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাংকে তার জমা আছে প্রায় ৪১ কোটি টাকা!

অথচ মাঠের ফুটবলে সাফল্য নেই মতিঝিলের এই ক্লাবটির। ১৭ বছর ধরে ফুটবলে নেই লিগ শিরোপা। এই ব্যর্থতার দায় লোকমান হোসেনকেই নিতে হবে বলে মনে করেন বাদল রায়। মোহামেডানের সাবেক পরিচালক, স্থায়ী কমিটির এ সদস্য শনিবার জানাচ্ছিলেন, ‘দেখুন, মোহামেডানে সব সময় আমরা সুখস্মৃতি নিয়ে খেলেছি। অথচ আজ আমাদের প্রিয় ক্লাব ব্যর্থতার তলানিতে। তার মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। তার দুর্নীতির কারণেই আজ আমাদের প্রাণপ্রিয় ক্লাব ধ্বংসের পথে। যে ক্লাবটি চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া কিছু বুঝতো না, সেই ক্লাবটি লোকমানের হাতে পড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ব্যর্থতার এ দায়ভার তাকেই নিতে হবে।’

আগের দিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করে নিয়েছেন লোকমান হোসেন তার বন্ধু। এবং তিনি এটাও বলেছেন তার ক্যাসিনো কাণ্ডে বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। পাশাপাশি এখনই বিসিবি পরিচালক লোকমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিসিবি।

পাপনের এমন কথায় হতাশ বাদল রায় বিস্ফোরক মন্তব্যই করলেন। তিনি বলেন, ‘লোকমান উনার বন্ধু ঠিক আছে। কিন্তু আমার তো মনে হয় মোহামেডান ক্লাব ধ্বংস করতেই লোকমানকে পাঠিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। জনাব, নাজমুল হাসান-আপনি বলেছেন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে আপনি ব্যবস্থা নেবেন। এটা কিন্তু ঠিক না, কারণ লোকমান নিজেই তার অপরাধ স্বীকার করেছেন।’

এ কারণেই বাদল রায়সহ মোহামেডানের অন্য ক্লাব কর্তাদের দাবী বিসিবি থেকে অপসারণ করা হোক লোকমানকে। বাদল রায় জানান, ‘উনার নৈতিক স্খলনের জন্যই উনাকে উনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন কর্মকর্তা থাকলে দেশের উপকার না হয়ে ক্ষতিই হবে। আমরা বিসিবি সভাপতিকে অনুরোধ করবো লোকমান হোসেনকে বিসিবি থেকে অপসারণ করুন।’

একই সঙ্গে লোকমান যে ৪১ কোটি টাকা অস্ট্রেলিয়ায় পাচার করেছেন শোনা যাচ্ছে তা ফিরিয়ে এনে মোহামেডানের ফান্ডে জমা করার দাবীও তুলেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একইসঙ্গে ক্রীড়াঙ্গনে, ক্লাবগুলোতে শুদ্ধি অভিযানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ধন্যবাদ দিয়েছেন তারা।

তবে মোহামেডান ক্লাবে যে ক্যাসিনো চলতো সেটা কোনোভাবেই জানা ছিল না বাদল রায়দের। শনিবার সাবেক এই ফুটবলার দাবী করেন, ‘ক্লাবে ক্যাসিনো রয়েছে এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না আমাদের। আর এখন তো শুনছি এই খেলায় ব্যক্তিগত অনেকের পকেট ভারী হয়েছে।’

এ অবস্থায় ঘরে বসে থাকতে রাজী নন মোহামেডানের সাবেক কর্মকর্তা, খেলোয়াড়রা। তারা রোববার পরিস্থিতি আরও বেশি করে বুঝতে ক্লাবে যাবেন। ক্লাবের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে লড়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিলেন।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোহামেডান ক্লাবের সাবেক কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বাবুল। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন এক সময়ের তারকা ফুটবলার কায়সার হামিদ, সাঈদ হাসান কানন, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, আবদুল গাফফার, রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির, ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব, কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ, সাজেদ এ আদেলসহ অনেকেই।

আরও পড়ুন-

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে লোকমান আটক, মাহবুবকে দুদকে তলব, বিব্রত বিসিবি

লোকমান আমার বন্ধু, তবে আমাকে বলেনি ক্লাবে ক্যাসিনো আছে: পাপন

‘আমি যে লোকমানকে চিনি সে জীবনে মদ খায়নি, জুয়া খেলেনি, কিন্তু ক্যাসিনো ভাড়া..

এ সম্পর্কিত আরও খবর